• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৭, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম

মুক্তাগাছায় মৃত ব্যক্তিরাও পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা

মুক্তাগাছায় মৃত ব্যক্তিরাও পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের হাতিল গ্রামের হযরত আলী। তিনি মারা গেছেন ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে। তিনি পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতার টাকা। প্রতি মাসের ভাতার টাকা তার নামেই উত্তোলন হচ্ছে ব্যাংক থেকে। 
তার মতো একই গ্রামের ছাইমন নেছা। তিনিও মারা গেছেন ২০১৬ সালের ৩ জুলাইয়ে। তার নামেও উত্তোলন করা হচ্ছে বয়স্ক ভাতার টাকা। 

এ রকমভাবে শুধু ঘোগা ইউনিয়ন থেকেই শতাধিক মৃত ব্যক্তির নামে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সমাজ সেবা অফিসের যোগসাজশে এ সব টাকা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সব অভিযোগের পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে। 

বর্তমান সরকার বয়স্ক, বিধবা, এতিম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য চালু করেছে বিভিন্ন মেয়াদের ভাতার কার্ড। এছাড়া নতুন করে চালু করা হয়েছে হিজড়াদের জন্য সরকারি ভাতা। এর সুবিধা পাচ্ছেন সমাজের হতদরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিরা। 

মুক্তাগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতার কার্ড চালু রয়েছে ১১ হাজার ৭৭৪টি। বিধবা ভাতার কার্ড রয়েছে ২ হাজার ৬৬৫টি। আর প্রতিবন্ধী কার্ড রয়েছে ২ হাজার ৯৬২টি। এছাড়া বিভিন্ন খাতে সরকার অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন কার্ড চালু রেখেছে। আর এ সব কার্ডের তালিকা প্রণয়ন করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা। আর এ সব কার্ডে পাওয়া গেছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। যাদের নামে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড চালু করা হয়েছে তাদের অনেকেই মারা গেছেন কয়েক বছর আগেই। অথচ তাদের নামেও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা ভাতার কার্ডে মৃত ব্যক্তিদের ছবি উঠিয়ে জীবিত ব্যক্তির ছবি বসিয়ে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। 

এ রকম ঘটনা কোনো ইউনিয়নে ফাঁস হচ্ছে আবার কোনো কোনো ইউনিয়নে গোপনই রয়ে গেছে। এভাবে জনপ্রতিনিধিরা অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমন খবর এখন পাওয়া গেছে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে। সাংবাদিকদের একটি দল উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নে ৪টি ওয়ার্ডে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে অনিয়মের বিভিন্ন চিত্র খুঁজে পান। 

ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে হাতিল গ্রামের হযরত আলী, ছাইমন নেছা, মকবুল হোসেন, সুরুজ আলী, আব্দুর রহমানসহ ১০ জন মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। অথচ তাদের নামে প্রতি তিন মাস পর পর ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বয়স্ক ভাতার টাকা। 

এ রকম একই ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে ৪৩ জনের নাম পাওয়া যায়। যারা কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন। তাদের নামেও সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কালিবাড়ি বাজার শাখা থেকে তোলা হচ্ছে বয়স্ক ভাতার টাকা। এ সব খবর রাখেন না মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের স্বজনদের মৃত্যুর পরেই তাদের কাছ থেকে ভাতা প্রদানের বই জমা নিয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লেবু। এ কারণেই মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জানেন না ওই সব কার্ডের আর কোনো তথ্য। 

ঘোগা ইউনিয়নের হাতিল গ্রামের মৃত হযরত আলীর স্ত্রী হালিমন নেছা বলেন, তার স্বামী মারা গেছেন আড়াই বছর আগে। ওই সময়ই তার কাছ থেকে তার স্বামীর বয়স্ক ভাতার বই নিয়ে গেছেন ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লেবু। এরপর তিনি আর এ কার্ডের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তার মত একই গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের স্ত্রী জেলেখা বেওয়াও একই কথা বলেন। তার স্বামীও মারা গেছেন ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল তারিখে। তার নামেও ব্যাংক থেকে ভাতা নেওয়া হচ্ছে। 

ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লেবু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার নাম জড়িয়ে তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে ওই সব কার্ড সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। 

স্থানীয় কালিবাড়ি বাজার শাখা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার এএম সোয়াইব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মৃত ব্যক্তিদের নামের তালিকা উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে সর্বশেষ তালিকা প্রদান করা হয়নি। এছাড়া তাদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। তাদের ব্যর্থতার কারণেই মৃত ব্যক্তিদের নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংক দায়ী না। 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অসীম সরকার বলেন, ঘোগা ইউনিয়ন থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা মৃত ব্যক্তিদের নামের তালিকা জমা দেওয়ার পর নতুন তালিকা তৈরি করা হয়। আর ওই ইউনিয়ন থেকে মৃত ব্যক্তিদের নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়নি। এ জন্য দায়ী ওই  ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা সরকার বলেন, ঘোগা ইউনিয়ন থেকে এ ধরনের অভিযোগের পর স্থানীয়ভাবে একটি ও জেলা সমাজ সেবা থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কেএসটি