• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০১৯, ১০:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৮, ২০১৯, ০৪:২০ পিএম

খুনের শহর বগুড়া

৩ দিনে ৭, ১৬ দিনে ১৯ খুন

৩ দিনে ৭, ১৬ দিনে ১৯ খুন

বগুড়া এখন খুনের শহর। নানা ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই এ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ খুনের শিকার হচ্ছে। চলতি মে মাসের ১৬ দিনে এ পর্যন্ত ১৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যা রীতিমতো মানুষের মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গত ১৩ মে থেকে ১৬ মের মধ্যে ঘটে যাওয়া ৭টি খুনের ঘটনা বিশেষ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে- অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে পরকীয়া, যৌতুক, পারিবারিক কলহ ইত্যাদির কারণে।

বগুড়ায় ১৬ মে ৩ খুন
গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকালে বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়নের চাঁদমুহা লয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল রশিদ দরবেশ (৬৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একইদিন যৌতুকের টাকা না দেয়ায় জেলার নামুজা বগাড়পাড়া গ্রামে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাবিরা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠে তার স্বামীর বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে জেলখানায় বন্ধুত্বের সূত্রধরে একে অপরের সঙ্গে বউ বদল করে রেজাউল ও বাদল নামের দুই মাদক কারবারি। এই বউ বদলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে বাদল হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন।

বুধবার (১৫ মে) রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভায় এ ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। রাতেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বগুড়ায় ১৯ ঘণ্টায় ৪ খুন
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে নিজ বাসার সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন মারুফ হোসেন ওরফে পাভেল (৩৫) নামের এক যুবক। তিনি শহরের চেলোপাড়া এলাকার মৃত আলহাজ্জ মকবুল হোসেনের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ৩ তলা বাড়ির উপর দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষের বিছানা, বাথরুম এবং ড্রইং রুমে রক্ত পড়ে আছে। বাসার অন্যান্য কক্ষগুলোও অগোছালো। দুটি কক্ষের একটিতে নেশার উপকরণ দেখা গেছে।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শিবগঞ্জের মোকামতলা থেকে মামী ও ভাগ্নের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মামীর সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পর্কের জেরে এ খুন হতে পারে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে।

নিহত মামী আলেয়া বেগম (৩৫) ভাগকোলা গ্রামের দিনমজুর সাইদুর রহমানের স্ত্রী। ভাগ্নে আপেল (২০) পার্শ্ববর্তী টেপাগাড়ী গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
 
মোকামতলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, আপেল পেশায় কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করে। ছোট বেলা থেকে আপেল তার নানা তোজাম্মেল হোসেনর বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। তার মামা সাইদুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়াকে আপেল অনৈতিক সর্ম্পক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। ৩ মাস আগে সুযোগ বুঝে আপেল তার মামী আলেয়ার ঘরে ঢুকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করে। ঘটনাটি মামী আলেয়া তার স্বামীকে জানালে এ নিয়ে গ্রামে শালিস বসে। এ সময় আপেলকে সর্তক করে দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে আবারও আপেল তার মামী আলেয়াকে অনৈতিক কার্যকলাপের প্রস্তাব দেয় বলে জানা যায়।

এছাড়া গত সোমবার (১৩মে) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শহরের মালতীনগর এলাকায় নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন জিন্নাত ফারজানা এলমা নামের এক গৃহবধূ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শজিমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

পুলিশ জানায়, নিহত এলমার পেটে ও বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। ৪ তলা ফ্লাটবাড়ির নিচতলায় তিন কক্ষের একটি বাসায় নিহত এলমা ব্যবসায়ী মুকুলের ২য় স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

তবে এসব খুনের বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানাতন চক্রবর্তী দৈনিক জাগরণকে জানান, এই হত্যাকাণ্ডগুলো পারিবারিক কলহ বিবাদ ও ব্যক্তিগত আক্রোস থেকে হয়েছে। অনেক হত্যাকাণ্ড ঘরের মধ্যে হয়েছে। তাই পুলিশের পক্ষে সকল পরিবার বা ব্যক্তিকে ঢালাওভাবে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। তবে এই হত্যাকাণ্ড গুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্তি পেতে সমাজের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বাড়ানো উচিত।

একেএস