• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০১৯, ০৯:৪২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০১৯, ০৯:৪২ এএম

৪৫ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ খানাখন্দে ভরা

৪৫ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ খানাখন্দে ভরা

ময়মনসিংহ-ধোবাউড়া-কলসিন্দুর সড়কের বেহালদশা গত প্রায় এক দশকেও কাটেনি। তারাকান্দা থেকে ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ খানাখন্দে ভরা। সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে ৩ উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। 

অভিযোগ এলজিইডি ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি। সেই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহনের ভাড়াও। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রসূতি মা-সহ রোগীদের। অথচ এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের। 

আরও অভিযোগ উঠেছে-এই কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রভাবশালী বলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। যদিও এলজিইডির স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমত কিবরিয়া জানিয়েছেন, কাজে গাফিলতির কারণে দুই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। তারপরও সড়ক উন্নয়ন ও মেরামত কাজে কোন গতি আসেনি। ধোবাউড়া থেকে কলসিন্দুর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনও শুরু করেনি ঠিকাদার! ফলে সামনের বর্ষায় মানুষের ভোগান্তির কোন সীমা থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ধোবাউড়া উপজেলা থেকে কলসিন্দুর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সড়কের সিলকোট ও কার্পেটিং উঠে এর কোথাও ইটসুরকি এবং কোথাও মাটির নিচের তলদেশ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। সাহাপাড়া ও দাইরপাড়ায় ডোবার মতো গর্ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে হাঁটু সমান পানি জমি কাদা জলে একাকার অবস্থা হচ্ছে। প্রায়ই এসব ডোবায় পড়ে ফেঁসে যাচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। 

স্থানীয়দের অভিযোগ ওভারলোডের বালুবাহী ট্রাক যাতায়াতের কারণেই সড়কটির এমন মরণদশা। কলসিন্দুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সড়কের বেহাল দশার কারণে মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকছে না। 

হালুয়াঘাট সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর জানান, খানাখন্দে পড়ে প্রতিদিন বালুবাহী ট্রাক আটকে যাওয়ায় ধোবাউড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

এদিকে তারাকান্দা থেকে ধোবাউড়া পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ১২ কিলোমিটার সচল রয়েছে। বাকি ২৬ কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগই ভাঙাচোরা। এর মধ্যে বওলার সুতারপাড়, বারইপুখরিয়া, ভুষাগঞ্জ, হরিয়াগাই, টিউকান্দা ও কেন্দুয়া বাজারের ১৭ কিলোমিটার একেবারেই বেহাল। বেহালদশার সড়কজুড়ে ছোটবড় অসংখ্য খানাখন্দ। বর্ষায় এসব খানখন্দে পানি জমে পরিণত হচ্ছে মরণডোবায়। সড়কের বওলার সুতারপাড় এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার এমনই বেহাল যে গত বর্ষায় প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হচ্ছে, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এ সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর ভোগান্তির সীমা থাকছে না। এমতাবস্থায় এলজিইডি ঘষামাজা করে এই অংশ কিছুটা সচল করেছে। 

ধোবাউড়া থেকে ময়মনসিংহ যেতে এক ঘণ্টার জায়গায় সময় লাগছে এখন তিন ঘণ্টা। সড়কটির উন্নয়ন ও মেরামতের জন্য ময়মনসিংহের মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার উত্থাপনের পরও সমস্যার দৃশ্যমান কোন সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ধোবাউড়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন। 

তারাকান্দা ধোবাউড়ার ৩৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বেহাল ১৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে গত ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রতিষ্ঠান নাওয়াল কনস্ট্রাকশন ও ফরিদপুরের হানিফ এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দিয়েছিল এলজিইডি। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা ছিল। এসময় কাজ শেষ করতে না পারায় এলজিইডি নাওয়াল কনস্ট্রাকশন এর কার্যাদেশ বাতিল করেছে। 

এর আগে আরেক ঠিকাদার শাহজাহান আলীর কার্যাদেশ বাতিল করেছিল এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের তারাকান্দা ধোবাউড়া সড়কের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কার্যাদেশ পাওয়ার পরও ধোবাউড়া-কলসিন্দুর পর্যন্ত সড়কের সাত কিলোমিটার উন্নয়নে ঠিকাদার এখনও কাজ শুরু করেনি।

কেএসটি