• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম

কৃষি পেশা বদলে মৎস্য চাষে ঝুঁকছেন রাঙ্গাবালীর কৃষক

কৃষি পেশা বদলে মৎস্য চাষে ঝুঁকছেন রাঙ্গাবালীর কৃষক

পটুয়াখালীর সাগর উপকূলীয় একটি দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। এ উপজেলায় প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষের মূল পেশাই হচ্ছে কৃষি ও মৎস্য। তবে কৃষিতে গত কয়েক বছর যাবত লোকশানের কবলে পড়েছেন এ উপজেলার হাজারো কৃষক পরিবার। যার ফলে কৃষি পেশা বদল করে এখানকার অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন মাছ চাষ ও জেলে পেশাকে। নিজ বাড়ির পুকুর, নদী পারের মাছের ঘের ও সরকারি ছোট ছোট খাল লিজ নিয়ে তারা মাছ চাষ করছেন।

জানাগেছে, গত কয়েক বছর ধরে তুলনামূলকভাবে ধানের দাম কম থাকায় রাঙ্গাবালীসহ উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা দু’তিন বছর আগে তরমুজ চাষ শুরু করেন। তরমুজ চাষ করে এই দু-তিন বছরে কয়েক হাজার পরিবার সাবলম্বী হয়। কিন্তু এবছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নষ্ট হয় যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির তরমুজ। এর পর কোন উপয়ন্ত না পেয়ে বিশাল সংখ্যক কৃষক ঝুঁকে পরেন মাছ চাষ ও জেলে পেশায়। 

এ বছর উপজেলা থেকে গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায় প্রায় পাঁচ শত ফিশিং বোর্ড। অনেকের আবার সহায় সম্বল কম থাকায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের ভয়ে সাগরে যেতে ভয় পায় অনেকেই। তাই এখানকার অনেকেইে স্থানীয়ভাবে পুকুর, নদী, মাছের ঘের ও সরকারি খাল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে খাল ও জলাশয়গুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এখানকার বাসিন্দারা।

বর্তমানে স্থানীয় সাংসদ মহিব্বুর রহমানের হস্তক্ষেপে অধিকাংশ খালই উন্মুক্ত। আর যে খালগুলো জেলা প্রশাসকের রাজস্বের অধিনস্থ তাও লিজ দেয়া হচ্ছে প্রকৃত মাছ চাষি ও কৃষকদের কাছে। এতে মাছ চাষে সম্ভাবনা আরও বেড়েছে উপকূলীয় এ উপজেলায়। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে ৩৫ একর জমির উপর গহীনখালী স্লুইস খাল। খালটি দীর্ঘদিন প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। বর্তমানে খালের দুই পারের কৃষকদের কাছে খালটি লিজ দিয়েছে জেলা প্রশাসক। এতে চতলাখালী ও গহীনখালী এলাকার শতাধিক পরিবার জীবিকা খুঁজে পেয়েছেন। দুই পারের ১শ ১০ পরিবারের লোকেরা মিলে মাছ চাষে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন। এখানে প্রায় ৩০ মণ মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন তারা। তাদের পরিকল্পনা এবছর তারা খালটিতে মোট ৫০ মণ মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। তারা জানান, সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে এখান থেকে যে পরিমাণ লাভ হবে তা দিয়ে ওই শতাধিক পরিবারে সচ্ছলতা আসবে। এ উপজেলায় মাছের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানিও করা যাবে।  

এ ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলার- চরমোন্তাজ, বড়বাইশদিয়া ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে শতাধিক মাছের ঘের, লিজকৃত সরকারি খাল ও ব্যক্তিগত পুকুরে কয়েক হাজার মানুষ মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 

উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের তিল্লা গ্রামের লিটন মৃধা বলেন, ‘আমাগো পূর্ব পুরুষ থেকে শুরু করে আমরা কৃষি কাজ করছি। এই কয়েক বছর ধরে ধানের দাম কম। প্রতিবছর ধান চাষ করে যা ব্যয় করি তা উঠানোই দায় হয়ে যায়। তাই মাছ চাষ করতে চাই। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আমাগো এলাকার সবাই মিলে গহীনখালী স্লুইস খাল লিজ নিছি। এহ্যানে মাছ চাষ শুরু করছি। আশা করি মাছ চাষ কইরা আমরা সংসার চালাইতে পারমু।’ 

রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলাটি মাছ চাষে উপযোগী একটি জায়গা। এখাকার মাটি ও পানি মাছ চাষে উপযোগী। এখানে মাছ চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ হচ্ছে এ উপজেলায়। এতে সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপক।

কেএসটি