• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৯, ১১:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০১৯, ১১:২২ এএম

লাশের অপেক্ষায় তিউনেশিয়ায় নিহত নাজিমের বাবা

লাশের অপেক্ষায় তিউনেশিয়ায় নিহত নাজিমের বাবা

‘আমি আর কিছু চাই না, শুধু পুতের মুখ দেখতে চাই। আমার পুতেরে এই মাটিতে কবর দিতে চাই। আমার সবি চলে গেছে আর কিছু যাওয়ার না। এখন শুধু পুতের লাশ চাই। তোমরা আমার পুতের লাশ আইন্না দেও’ এভাবে পুত্র শোকে কাতর নাজিম উদ্দিনের বাবা আজির উদ্দিন ছেলের লাশ ফেরত পাওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করে কথা বলছিলেন। 

গত বছরের রমজান মাসের ৭ তারিখে নাজিমউদ্দিন মদনমোহন কলেজের হিসেব বিজ্ঞন সম্মান ২য় বর্ষের ছাত্র ছিল। তারা চার ভাই, তিন বোন। নাজিমের বারা আজির উদ্দিন দীর্ঘদিন সৌদি প্রবাসী ছিলেন। কয়েক বৎসর হলো তিনি প্রবাসী জীবনের ইতি টেনে স্থায়ীভাবে দেশে এসে গ্রামের বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন। অভাবী পরিবারের সদস্য ছিল না নাজিম। সিলেটের পার্ক স্ট্রিটের বাসায় থেকে নাজিম লেখাপড়া করতো। হঠাৎ একদিন বাড়িতে এসে তার বাবা আজির উদ্দিনকে বলে- সে ইতালি যাওয়ার একটি ভালো লাইন পেয়েছে। দালাল তার পূর্ব পরিচিত। শিপের গেইমে সে ইতালি পৌঁছাবে। ইতালিতে অবস্থান করা নাজিমের স্বজনরা তাকে রিসিভ করার পর বাকি টাকা দেবে। বাবা আজির উদ্দিন ছেলে নাজিম উদ্দিনকে এভাবে ইতালি যাওয়ার ঝুঁকির কথা বুঝিয়ে বলেন। কিন্তু নাজিম তার কোন কথা শুনতে চায়নি। 

ছেলের এক রোখা সিদ্ধান্তে আজিরউদ্দিন কিছু টাকা ছেলের হাতে তুলে দেন। বাকি টাকা দালালের হাতে কোন প্রমাণ ছাড়াই মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা স্থানীয় দালালের হাতে তুলে দেয়। পরে লিবিয়া যাওয়ার পর দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও দেড় লাখ এবং তৃতীয় কিস্তিতে ১ লাখসহ মোট ৯ লাখ টাকা দালালের মাধ্যমে পরিশোধ করে।

লিবিয়ার উপকূলীয় শহর জিলটন থেকে সে শিপের গেইমে (পণ্যবাহী জাহাজ দিয়ে ইতালি যাওয়ার) কথা থাকলেও তাকে ওঠানো হয় প্লাস্টিকের নৌকার গেইমে ওঠানো হয়। দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা নৌকাটি উত্তাল সাগর দিয়ে চলার পর এক সময় নৌকার তলদেশ ফেটে গিয়ে অবৈধ অভিবাসী বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়। সাগরে সলিল সমাধি হয় ২১ বৎসর বয়সের তরুণ নাজিমের। পরে সুনামগঞ্জ রেডক্রিসেন্টের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পারেন তিউনেশিয়ায় নৌকা ডুবিতে তার ছেলের মৃত্যুর খবর। 
নাজিমের মা ছবিরুন্নেছা বলেন, আমাদের ভাত কাপড়ের কোন অভাব ছিল না। সুখেই দিন কাটছিল তাদের। স্থানীয় দালালরা তার ছেলে ইতালিতে মোটা বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে সাগরে ডুবিয়ে হত্যা করেছে। এজন্য স্থানীয় দালালদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। 

নাজিমের বাবা আজির উদ্দিন বলেন, তাদের এলাকায় অবৈধভাবে বিদেশ পাঠানোর জন্য ১০ জন চিহ্নিত দালাল রয়েছে। তারা পরিচিত জনদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ পাঠানোর নাম করে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। প্রথমে ভালো ব্যবহার করলেও পরে তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং মোবাইলসহ যোগাযোগের সকল মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। এমনকি ভিন দেশে অবস্থান করা ছেলের মুখটিও দেখতে দেয় না বাবা মাকে। নাজিম গেইমে ওঠার আগে এসএমএস করে পরিবারের সকলের কাছে দোয়া চায় এবং গেইমে ওঠার কথা নিশ্চিত করে কিন্তু কোন কথা বলতে দেয়নি বিদেশে অবস্থান করা দেশীয় দালালরা। তিনি বলেন, আর কোন মায়ের সন্তান জেন অবৈধ উপায়ে বিদেশে না যায়। গেলে নাজিমের মতো পরিণতি তাদেরও হতে পারে। 

কেএসটি