• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০১৯, ০৯:৩৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৬, ২০১৯, ১০:৩৪ এএম

অভাবের তাড়নায় বাবার হাতে দুই শিশু কন্যা খুন

অভাবের তাড়নায় বাবার হাতে দুই শিশু কন্যা খুন
ঘাতক বাবা শফিকুল ইসলাম ও নিহত শিশুরা- ছবি : জাগরণ

নরসিংদীতে অভাবের তাড়নায় দুই শিশুর হত্যা করেছে তাদের বাবা শফিকুল ইসলাম।

শনিবার (২৫ মে) লঞ্চঘাটের টয়লেট থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত শিশু দুটি হলো- নুসরাত জাহান তাইন (১১) ও তানিশা তাইয়েবার (৪)।   

এ ঘটনায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শিশুদের বাবা শফিকুল ইসলাম অভাব অনটনের কারণে শিশু দুটিকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। সে একাই দুই মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।তবে শফিকুল তার এ স্বীকারোক্তিতে স্থির থাকতে পারছে না বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ।

এদিকে শফিকুল ইসলাম মাঝেমধ্যেই মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন থাকতেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ঘাতক বাবাকে। 

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ পরিবারের সদস্য ও শফিকুল ইসলামের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, ডাক্তার দেখানোর কথা বলে শফিকুল ইসলাম দুই মেয়েকে শিবপুর উপজেলায় নিয়ে যান কিন্তু সেখানে ডাক্তার না পাওয়ায় তাদের নরসিংদী নিয়ে যান। এক পর্যায়ে দুই বোন লঞ্চঘাট দেখতে চাইলে তাদের নরসিংদীর কাউরিয়া পাড়া লঞ্চঘাটে নিয়ে যান শফিকুল ইসলাম।

পুলিশ সুপার আরও জানান, শুক্রবার রাতে লঞ্চঘাটের টয়লেট থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলেই নিহতদের নিজের সন্তান দাবি করেন মনোহরদীর চালাকচরের শফিকুল ইসলাম। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয় এবং শিশু দুটি তার সন্তান বলে নিশ্চিত করেন পুলিশ।

পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন জানান, লঞ্চঘাট দেখাতে নিয়ে আসার এক পর্যায়ে পারিবারিক খরচ, বাচ্চাদের খরচ, ঈদের খরচ, আর্থিক অভাব অনটনের অস্থিরতার মধ্যেও লিচু খেতে চায় শিশু দুটি। এ জন্য প্রথমে ছোট মেয়েকে লঞ্চঘাটের টয়লেটে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং একইভাবে পরে বড় মেয়েকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করে শফিকুল ইসলাম।

কিন্তু পরবর্তীতে আবার এসব স্বীকারোক্তিতে স্থির না থেকে আমি কিছুই জানি না বলে অসংলগ্ন কথা-বার্তাও বলে শফিকুল। তবে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিবরণ, নিহতদের গলায় আঘাতের চি‎হ্ন, ঘটনার সময়সহ স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের লঞ্চঘাটে শিশু দুটির উপস্থিতি বাবা শফিকুল ইসলামের হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে পরিবারের সদস্যদের দাবি শফিকুল ইসলাম বাড়িতে প্রায়ই মানসিকভাবে অসুস্থ থাকতেন। ১০-১১ বছর আগে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে শফিকুল ইসলামকে দুই তিনমাস আবদ্ধ করে রাখা হয় এবং মানসিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর সুস্থ হয়ে সে বিয়ে করলে দুই কন্যা সন্তানের জনক হন তিনি। সম্প্রতি তারমধ্যে আবারও অভাব অনটন নিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি লক্ষ্য করে পরিবার।

শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় নরসিংদীর মেঘনা নদীর পাড়ের কাউরিয়াপাড়া লঞ্চঘাটের টয়লেটের ভেতরে দুই শিশুর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ টয়লেটের ভেতর থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। পরে পুলিশ তাদের পরিচয় জানতে পারে।

টিএফ