• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০১৯, ০৪:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৬, ২০১৯, ০৪:৫৯ পিএম

মা মাছ ডিম ছাড়ায় উৎসব হালদা পাড়ে

মা মাছ ডিম ছাড়ায় উৎসব হালদা পাড়ে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। শনিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ১০টা থেকে ডিম আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহ করছেন। সকাল থেকে নমুনা ডিম ছাড়ছিল মা মাছগুলো, যা ডিম ছাড়ার পূর্ব লক্ষণ হিসাবে ধরা হয়। 

হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী সুনীল জলদাস বললেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় জাল তুলে দেখি চার বালতির মত ডিম পেয়েছি!’

হালদা নদীর মাদার্শা ঘাটের তালেব বলেন, ‘আমি তিন বালতি ডিম পেয়েছি। এক বালতিতে ১০-১৫ কেজি করে রাখা যায়।’

মাছুয়া ঝর্ণা, শাহ মাদারি এবং মদুনাঘাটসহ তিনটি হ্যাচারির ১০৮টি কংক্রিট ও ১০টি প্লাস্টিকের কুয়ায় হালদার ডিম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, ‘রাতে ডিম পাচ্ছেন জেলেরা। শুরুতে কম পেলেও গভীর রাতে ভালোই ডিম সংগ্রহ করতে পারছে। এবার হালদায় জেলেদের ডিম সংগ্রহে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রশাসন। আর কঠোর নজরদারিও রয়েছে সংগ্রহকারীদের ওপর।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৮ মাস ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। এর মাঝে কুয়া সংস্কার করেছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জাল জব্দ করেছি। ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালানো বন্ধ করেছি।’

হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহার উদ্দীন জানান, সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রবল বর্ষণ হলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় বৈশাখ মাসের মাঝামাঝিতে নদীতে মা মাছ অল্পপরিমাণ ডিম ছেড়েছিল। মা মাছ সাধারণত অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে। এবার দেরি করেই ডিম ছাড়ছে হালদার মা মাছ। তবে এভাবে অভিযান চালিয়ে মা মাছ সংরক্ষণ, ডিম থেকে রেণু তৈরির কুয়া সংস্কার, কুয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগের কারণে হালদায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখনো পর্যন্ত ২০০-২৩০টি নৌকা নিয়ে মাছ সংগ্রহ চলছে। প্রত্যেক নৌকায় এখন পর্যন্ত দুই থেকে তিন বালতি করে ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে হালদার গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই হালদা নদীতেই রয়েছি। যা ডিম পাওয়া যাচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। তবে আশা করছি এখনকার চেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ হবে এবং আগের চেয়ে বেশি মাছ সংগ্রহ হবে। আমারা আগামী ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহের কাজে থাকব।’

হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছেড়েছে। তবে ডিমের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম।

তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ডিম সংগ্রহ করার পর কেউ যেন মা মাছ ধরতে না পারে। ডিম ছাড়ার পর মা মাছগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়, ওই সুযোগে মা মাছ ধরা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রশাসনকে সজাগ থাকতে অনুরোধ জানান তিনি।

হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে দুই হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এবার আরো বেশি ডিম সংগ্রহ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেএসটি