• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৭, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম

৬ লাখ মে. টন ধান নিয়ে শঙ্কিত দক্ষিণের কৃষকরা

৬ লাখ মে. টন ধান নিয়ে শঙ্কিত দক্ষিণের কৃষকরা

সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরুর পরেও হাসি নেই দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের মুখে। এই অঞ্চলে এবার প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন বোরো ফসল উৎপাদন হলেও সরকার সংগ্রহ করছে মাত্র ২১ হাজার ৪৯ মেট্রিক টন। যার মধ্যে ধানের পরিমাণ মাত্র ৫ হাজার ১৯ মেট্রিক টন। ফলে বাকি ৬ লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান ও চালের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে এখনো শঙ্কিত কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয় (খামার বাড়ি) সূত্রে জানাগেছে, গত বছরের থেকে এ বছর বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন বেশি হয়েছে। বিগত ২০১৭-১৮ সনে রবি মৌসুমে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৮৭৫ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন ধান। এবার তার থেকে কম অর্থাৎ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে বোরো ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন। এরই মধ্যে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমি থেকে ফসল কর্তন করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ধান উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৯ দশমিক ১ মেট্রিক টন। বাকি ধান কর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সরেজমিনে বরিশাল সদর উপজেলার শার্ষী গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক রাবেয়া ও অনোয়ার। স্বপরিবারে কৃষি কাজ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। এ বছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বোরা ধান আবাদ করেছিলেন। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে নিজেদের শ্রম এবং এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ধান আবাদ করে ৪০ মণ ফলন পেয়েছেন। যার বাজার মূল্য রয়েছে ২০ হাজার টাকা। যেখানে উৎপাদন খরচের পর ১৫ হাজার টাকা লাভবান হওয়ার আশা করেছিলেন সেখানে লোকসান ১০ হাজার টাকা বলে জানান এই কৃষক পরিবার। ক্ষুদ্র এ কৃষক পরিবার এখন এনজিওর টাকা পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত।

সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের আস্তাকাঠি গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, তিন একর সম্পত্তির মধ্যে ২ একর জমিতে নিজে ধান লাগিয়েছি। বাকি এক একর জমিতে বর্গা দিয়েছি। ২ একর জমিতে ফসল উৎপাদন হয়েছে ১৮০ মণ ধান। যা ফলাতে খরচ হয়েছে এক লাখ ৬ হাজার টাকা। এরপর আবার মাঠের ফসল ঘরে তুলতে শ্রমিক মজুরি দিতে হয়েছে অনেক টাকা। গ্রামের পাইকাররা মণ প্রতি মোটা ও চিকন ভেদে ৪শ থেকে ৫শ টাকা ধানের মূল্য দিচ্ছে। এর ফলে একজন কৃষককে কম হলেও প্রতি মণ ধানে লোকসান গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক তাওফিকুল আলম বলেন, ছয় জেলায় আমাদের ১০ টাকা মূল্যের কার্ডধারী ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৫ জন কৃষক রয়েছেন। যারা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি রবি মৌসুমে বোরো ফসল আবাদ করে থাকেন। কার্ডধারী কৃষকরাই সরাসরি সরকারের কাছে ধান ও চাল বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চল ধান উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময়। কিন্তু মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ায় মিল মালিক বা গ্রামের পাইকারদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে।

এদিকে, খাদ্য অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত তালিকা অনুযায়ী আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান ক্রয় করছি। প্রতিমণ ধানের মূল্য দেয়া হচ্ছে এক হাজার চল্লিশ টাকা। সে হিসেবে কৃষকরা প্রতি কেজি ধানের মূল্য পাচ্ছে ২৬ টাকা। আর প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের মূল্য দেয়া হচ্ছে ৩৬ টাকা।

তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে মোট ৫ হাজার ১৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। এর পাশাপাশি ১৬ হাজার ৩০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবেন তারা। একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৭০ মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। সে হিসেবে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড়শ জন কৃষকই বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল ও ধান সরবরাহ করতে সক্ষম।

খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানাগেছে, বরিশাল জেলা থেকে এক হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন ধান ও চার হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ঝালকাঠি থেকে ৩২১ মেট্রিক টন ধান ও ১ হাজার ৫৪৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, পিরোজপুর জেলা থেকে ৬৮৬ মেট্রিক টন ধান ও ১ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ভোলা জেলা থেকে ২ হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন ধান ও ৫ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, পটুয়াখালী জেলা থেকে ৯১ মেট্রিক টন ধান ও ২ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং বরগুনা জেলা থেকে ১৬ মেট্রিক টন ধান ও ৭০৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, শুনেছি ধান ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধি করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন নির্দেশনা আমাদের দেয়া হয়নি। নির্দেশনা পেলে সেভাবে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, প্রতি কৃষকের কাছ থেকে যাতে ২০ মণ করে ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হয় সে জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যাতে করে সকল কৃষকই স্বল্প হলেও লোকসান কমাতে পারে। পাশাপাশি সরকারি ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা আরো বেশি নির্ধারণ করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বলেন, বরিশাল বিভাগে ধান-চাল সংগ্রহের চিত্রটা খুবই খারাপ। এই অঞ্চলে উৎপাদন বেশি হলেও সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা খুবই কম। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে কৃষকরা উদ্বিগ্ন। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধি হলে কৃষকদের জন্য অনেক উপকার হতো।

কেএসটি