• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৯, ০২:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৯, ২০১৯, ০৬:০৭ পিএম

নুসরাত হত্যা মামলা

১৬ আসামির বিরুদ্ধে ফেনীর আদালতে চার্জশিট

১৬ আসামির বিরুদ্ধে ফেনীর আদালতে চার্জশিট

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮) হত্যা মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৯ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ৮২২ পৃষ্ঠার চার্জশিট (তদন্ত প্রতিবেদন) জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম। তদন্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয় ৬৯ জন সাধারণ জনতা, ২৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৯২ জনের সাক্ষ্য।

তদন্ত  প্রতিবেদন, দীর্ঘ এক মাস ১৯ দিনের তদন্তে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা, হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, মাদ্রাসায় অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াতেই নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা।

আলোচিত এ ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ছিলেন মাদ্রাসাটির পরীক্ষার্থী।

হত্যা মামলায় ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকারীদের বাঁচানোর আশ্বাস দেওয়া এবং এক আসামির সঙ্গে ফোনালাপের ঘটনায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২৬ সেকেন্ডের সেই কথোপকথন পিবিআইয়ের হাতে আছে। নুসরাতকে শ্লীলতাহানির ঘটনার পর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন থামাতে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেন বলে পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে।

মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে নুসরাত হত্যার সচিত্র তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন তিনি। ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আটজন নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

ওই ১৬ জন হলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ (৫৭), গভর্নিং বডির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন (৫৫), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আলম কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)। তাদের প্রত্যেকেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে পিবিআই।

হত্যাকারীরা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে মাদ্রাসার আলেমদের অপমান ও প্রেমে ব্যর্থতার কথা বলেন। কিন্তু পিবিআই সেটি পায়নি। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ওই মাদ্রাসার সব ছাত্রীর স্বার্থে মেয়েটি প্রতিবাদ জানিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্রীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন নুসরাত। এ কারণে পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করা হয়। ১৬ জনই বিভিন্নভাবে লাভবান হয়েছেন।

পিবিআই জানায়, চারটি দল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। একটি দলে ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ, যিনি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আরেক দল হত্যাকাণ্ডে পূর্ণ সহায়তা করেছে। একটি দল মাদ্রাসার ফটক পাহারা দিয়েছে এবং সেখান দিয়ে যেন লোকজন না ঢোকে তা দেখেছে। আর দুজন সাইক্লোন শেল্টারের গেট পাহারা দিয়েছে। এ ছাড়া চারদিক থেকে সহায়তা করেছেন আরও দুজন। তাদের একজন রুহুল আমিন, অন্যজন মাকসুদ আলম।

গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন নুসরাত। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন সিরাজ। গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে বলে খবর দেয়। পরে নুসরাত ওই ভবনের চারতলায় যান। সেখানে বোরকা পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

গুরুতর দগ্ধ নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়।

৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ১০ এপ্রিল রাতে মৃত্যু হয় নুসরাতের। সেদিনই পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তে নামে পিবিআই।

টিএফ/এনআই

আরও পড়ুন