• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০১৯, ০৪:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৯, ২০১৯, ০৪:৫০ পিএম

লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন, হুমকির মুখে ১০ গ্রাম

লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন, হুমকির মুখে ১০ গ্রাম
মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে ও তীর রক্ষা বাঁধের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল -ছবি : জাগরণ

বর্ষা আসতে না আসতেই লক্ষ্মীপুরে মেঘনা ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। একারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দুই উপজেলার দু’লাখ মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে ১০ গ্রামের বাড়িঘর ও ফসলি জমি। মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে ও তীর রক্ষা বাঁধের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে রামগতি-কমলনগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হাজার হাজার মানুষ।

রোববার (৯ জুন) দুপুরে ‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ উদ্যোগে কমলনগরের হাজিরহাট বাজারে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে, ঈদের পরদিন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও ভিটামাটি রক্ষায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা জানমালের রক্ষার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এ কারণে গত ১ বছর বাঁধে ৭ বার ধস নামে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাঁধে আবারো নতুন করে ধস দেখা দেয়। অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করায় বার বার বাঁধে ধস নামছে।

বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছে কমলনগর উপজেলার দু’লাখ মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দু’পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে।

কমলনগর উপজেলার মাতব্বরহাটে ভেঙে যাওয়া বাঁধের একাংশ -ছবি : জাগরণ

নিন্মমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করে কমলনগর উপজেলা বাসীকে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।

এদিকে নদী ভাঙন রক্ষা ও বাঁধ নির্মাণের দাবিতে ‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ উদ্যোগে ঈদের পর থেকে ৩ দিন ধরে সমাবেশ ও মিছিল অব্যাহত রেখেছেন। সংগঠনটির আহবায়ক সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার ফলোয়ানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতলব, রাকিব হোসেন, দিদার হোসেন প্রমুখ।
 
স্থানীয়রা জানান, গত দু’মাসের মধ্যে কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ধসে দক্ষিণ অংশের প্রায় দশ মিটার নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পুরো বাঁধ। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছেন, অধিক স্রোতের কারণে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এ ধসের কারণে পুরো বাঁধই এখন হুমকির মুখে।

এরইমধ্যে অনেকে ঘর বাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে খুপরি ঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নতুন করে বসতবাড়ি হারিয়ে ১০ হাজার মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

জানাগেছে, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়ি বাঁধ রয়েছে। মেঘনার ভয়ঙ্কর থাবায় এরইমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা না আসতেই রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকিতে রয়েছে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, চরফলকন, মাতব্বরহাট, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার বাংলা বাজার, আসলপাড়া, গাবতলী ও বড়খেরীসহ ১০টি এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা। আর ভেসে গেছে নবীগঞ্জ, সাহেবের হাট, চর লরেঞ্জ, কাদির পণ্ডিতের হাট, তালতলী, মাতাব্বর হাট, তুলাতলীর এলাকার ৫০ ভাগ এলাকা।

রামগতি ও কমলনগর হাসপাতাল, আলেকজান্ডার বাজার ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি, ফসলি জমিসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ হুমকির মুখে রয়েছে। সম্প্রতি ‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ উদ্যোগে বেড়ি বাঁধ রক্ষা ও ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। 

‘কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ’ সংগঠনটির আহবায়ক সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার ফলোয়ানের জানান, দ্রুত নদী বাঁধ দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্যাহ মাস্টার জানান, তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে জোয়ারের পানিতে ফসলাদি তলিয়ে যায়। 

কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পি জানান, তীর রক্ষা বাঁধ ভাঙার কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। বর্তমানে ধসে যাওয়া বাঁধসহ নতুন আরও ৪শ মিটার বাঁধের টেন্ডার হয়েছে।
 
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা জানান, রামগতি থেকে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ১ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ১৭শ ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। তবে বর্তমানে নদীতে ধসে যাওয়া অংশসহ নতুন করে আরও ৪শ মিটার বাঁধের মেরামতের টেন্ডার হয়েছে।

 

একেএস