• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১১, ২০১৯, ০৭:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১১, ২০১৯, ০৭:১৪ পিএম

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের

পা ফেলার জায়গা নেই পাটুরিয়া ঘাটে

পা ফেলার জায়গা নেই পাটুরিয়া ঘাটে

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় বসে আছেন নারী-শিশুসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা। আর যাত্রীদের এই ভোগান্তিকে পুঁজি করে পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ তাদের। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না।

ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড় থাকায় পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় গাড়ির কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ গুণ ভাড়া আদায় করছেন বলে জানান তারা।

এদিকে বাস সংকটের কারণে বাসের পাশাপাশি খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, রিকশাভ্যানে করেও অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা। সেখানেও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। গণপরিবহন সংকটের কারণে একরকম বাধ্য হয়েই তারা ঝুঁকি নিয়ে এসব গাড়িতে চড়ছেন বলে জানান তারা।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে অবস্থানকালে দেখা যায়, ফেরি ও লঞ্চযোগে পাটুরিয়া ঘাটে আসছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা। পুরো ঘাট এলাকা যাত্রীদের পদচারণে মুখর। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার (১২ জুন) গার্মেন্ট কর্মীদের অফিস শুরু হওয়ায় তারা মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছুটছেন কর্মস্থলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, প্রতিটি গাড়িতেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য দিন ঘাটে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকলেও নিচ্ছেন। বাসের সিট পূরণ হওয়ার পর ঘাড়ের ওপর দিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। এতে বাসের যাত্রীরা অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে যাতায়াত করছেন।

কুষ্টিয়া জেলার গার্মেন্ট কর্মী সাবিনা আক্তার বলেন, তিনি তার দিনমজুর স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে ৩ ঘণ্টা ধরে পাটুরিয়া ঘাটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরছেন। হাতে অতিরিক্ত টাকা নেই। তিনজনের ঢাকায় যেতে তার হাতে আছে ৮০০ টাকা। কিন্তু বাস ভাড়াই চাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ কারণে তিনি কোনো গাড়িতেই উঠতে পারছেন না। বড় বিপদে আছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে পাটুরিয়া ঘাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করার পর সেখান থেকে দফায় দফায় পুলিশ গিয়েও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বন্ধ করতে পারছে না। পুলিশ গেলে বাসের স্টাফরা সরে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আবার তারা বাসে এসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এমন বাস্তবতা স্বীকার করে পাটুরিয়া ঘাটের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাসেল আরাফাত বলেন, যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে। পাটুরিয়া থেকে ঢাকামুখী যাত্রী আছে কিন্তু পাটুরিয়ামুখী যাত্রী কম। এ কারণে ঢাকা বা অন্যত্র থেকে গাড়িগুলোকে খালি আসতে হয় বলে পাটুরিয়া থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের কাছ থেকে একটু বেশি ভাড়া না নিলে তাদের পোষায় না বলে জানান তিনি। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, গাড়ি সংকটের কারণে যাত্রী পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় তিনি নিজ উদ্যোগে ঢাকার পরিবহনের নেতাদের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত গাড়ি এই রুটে এনে যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করেছেন।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে পাটুরিয়া ঘাটে এবং মহাসড়কে মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে। তারা কাজ করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অপরাধে গত কয়েক দিনে বেশ কিছু পরিবহনকে জরিমানাও করা হয়েছে।

তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি ও লঞ্চ থাকায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান।

এনআই