• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০১৯, ১০:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৫, ২০১৯, ১০:১৭ পিএম

বহুমুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ

বহুমুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ

● সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা- ডিআইজির ঘুষ কেলেঙ্কারি 

● চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ২ হাজার পুলিশের সাজা 

● গত ৫ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৫২০টি ফৌজদারি মামলা 

● ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পুলিশ বাহিনী বা সদর দফতরের নয় 

● অন্যায় করলে কোনও পুলিশ সদস্যকে এতটুকুও ছাড় নয়

খুন-গুম-ঘুষ-ধর্ষণ-নির্যাতনসহ বহুমুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। সম্প্রতি পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের ঘুষ কেলেঙ্কারি, ফেনীর সোনাগাজী এলাকার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে থানার ওসি মোয়াজ্জেমের সংশ্লিষ্টতা, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় শাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কনস্টেবল অসীম ভট্টাচার্য গ্রেফতার এবং গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইজাদুর রহমানকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়ার অভিযোগে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করাসহ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনায় গোটা পুলিশ বিভাগে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আর এ সব ঘটনায় সমালোচিত হচ্ছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় পুলিশের নীতি-নির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো।

বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অপরাধী-দুর্নীতিবাজ যত বড়ই হোক, এমনকি দলের (আওয়ামী লীগের) হলেও কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে। একইসঙ্গে অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর বকসি বাজার কারা অধিদফতরের কারা কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ধরা পড়বেই। তার পালিয়ে যাবার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ডিআইজি মিজানের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। অপরাধীদের সাজা পেতেই হবে। 

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, ডিআইজি মিজানের বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের কঠোর দৃষ্টিগোচরে আছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।    

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আলোচিত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। 

বুধবার (১২ জুন) রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে কমিশনের পরিচালক বরখাস্তকৃত খন্দকার এনামুল বাছিরের পরিবর্তে পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। 

দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেন ডিআইজি মিজান। এ বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়াটারে একটি সূত্র জানায়, ২ বছর আগের দায়ের করা মামলায় ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সে প্রতিবেদনে ঘটনায় জড়িত ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। তিনি অনুসন্ধান শেষে সম্প্রতি ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, অনুসন্ধানকালে পরিচালক এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে। যদিও পরে তা অস্বীকার করেন এনামুল বাছির। এই আলোচনার মধ্যে গত ১০ জুন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে কমিশন।

আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী এলাকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির নির্মম হত্যাকাণ্ডে সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেফতারি পরোয়ানা রাজধানী ছেড়ে যশোরে পোঁছে গেছে। সমালোচিত ওসি মোয়াজ্জেমের বাবার বসবাসের সূত্রে যশোরে তার গ্রামের বাড়ি স্থায়ী ঠিকানায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জেলা পুলিশের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আনসার উদ্দিন বলেন, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের যশোরের পৈতৃক বাড়ি ও তার স্বজনরা পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে ধরিয়ে দেয় বোরকা পরিহিত কয়েকজন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু ঘটে। এর কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম এ সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে (সোমবার) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানার জারির পর থেকে লাপাত্তা সমালোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় শাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কনস্টেবল অসীম ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পর বুধবার (১২ জুন) বিকেল চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ছাগলফার্ম এলাকা থেকে অসীমকে গ্রেফতার করা হয়। 

অসীম ভট্টাচার্য খুলনার দৌলতপুরের মৃত দুলাল ভট্টাচার্যের সন্তান। তিনি চুয়াডাঙ্গা সিআইডি বিভাগে কর্মরত।

পুলিশ জানায়, বিকেলে ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসসহ চার কনস্টেবল নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। এ সময় মুখে গামছা জড়িয়ে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তার গতিরোধ করেন। 

এ বিষয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, গাড়ি থামিয়ে তার গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আমরা তার মুখের গামছা সরালে নিশ্চিত হই তিনি শাশুড়ি হত্যা মামলার পলাতক আসামি কনস্টেবল অসীম। এ সময় তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় দেড় কিলোমিটার ধাওয়া করার পর আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হই। এ সময় অসীম তার কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে এক কনস্টেবলকে আঘাত করার চেষ্টা করে।  

পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ৮ জুন (শনিবার) ভোরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের মাদ্রাসা পাড়ার ভাড়াটিয়া বাসাতে শাশুড়ি শেফালী অধিকারীকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে জেলা সিআইডিতে কর্মরত কনস্টেবল অসীম ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে স্ত্রী ফাল্গুনী অধিকারী ও শ্যালক আনন্দ অধিকারীকেও খুনের উদ্দেশে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে। পরে তাদের দু’জনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন অভিযুক্ত অসীম। ঘটনার ৫দিন পর পুলিশ হাতে গ্রেফতার হয় ঘাতক অসীম।

গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইজাদুর রহমানকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়ার অভিযোগে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়। বুধবার (১২ জুন) বিকেলে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। 

জানা গেছে, জয়দেবপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান গত ২৯ মে (বুধবার) বিকেলে ইজাদুরের মোবাইলে ফোন কল করে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন। যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করেন তবে তার নির্বাচনি কাজ যারা করবেন তাদের অসুবিধা হবে। কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেন। পরে ইজাদুর এবিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাজীপুর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। নির্বাচন কমিশন তার অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ওসি আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। 

গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) সামসুন্নাহার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে জয়দেবপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ পুলিশের একজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এবং র‌্যাব যৌথভাবে এই ইয়াবা উদ্ধার অভিযান চালায়। গ্রেফতার সিদ্দিকুর রহমান নগর পুলিশের বন্দর জোনে টাউন সাব ইন্সপেক্টর (টিএসআই) হিসেবে কর্মরত বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

বগুড়া সদর থানায় হেফাজতে রেখে এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

শনিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের এক আদেশে তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বরখাস্তকৃতরা হলেন- বগুড়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল জব্বার, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এরশাদ আলী ও মুন্সী কনস্টেবল এনামুল হক।

পুলিশের নির্যাতনের শিকার সোহান বাবু আদর (৩২) বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ার সাইদুর রহমানের সন্তান। আদর ও তার বড় বোন সম্পা বলেন, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত ১০টার দিকে থানার মুন্সি কনস্টেবল এনামুল হক মোবাইল ফোন করে আদরকে থানায় ডেকে আনেন। থানায় আসার পর আদরকে হাজতে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে তার বোন সম্পা রাতেই থানায় গেলে তাকে জানানো হয়- আদরের বিরুদ্ধে একই এলাকার সাথী বেগম তার মেয়েকে ইভটিজিং ও পাওনা টাকা না দেয়ার অভিযোগ করেছেন।

আদর বলেন, সেই রাত থেকে গত শুক্রবার (১৪ জুন) রাত ১১টা পর্যন্ত কনস্টেবল এনামুল এসআই জব্বার এবং অজ্ঞাত একজন তাকে নির্যাতন করে। কখনও ঝুলিয়ে আবার কখনও হ্যান্ডকাফ দিয়ে হাত বেঁধে নির্যাতন করে। এতে কয়েকবার তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে থানা থেকে তার বাবা ও বোনকে ডেকে আনা হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে কয়েকটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, পুলিশের মধ্যে যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে তা খোদ পুলিশ বিভাগের তৈরি পরিসংখ্যানেই পাওয়া যায়। পুলিশের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নানা ধরনের ছোট বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তার কম বেশি সাজা হচ্ছে। 

প্রতি বছর গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার পুলিশের সাজা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ২ হাজার পুলিশের সাজা হয়েছে। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সাজা হয়েছে এক হাজার ৯০০’র বেশি। ইন্সপেক্টর, এএসপি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২৮ জনের বেশি সাজা পেয়েছেন। 

পুলিশের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর শুধু যে বিভাগীয় মামলায়ই সাজা হচ্ছে তাই নয়, কঠোর অপরাধের বিচারের জন্য পুলিশ বিভাগ থেকেই অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হচ্ছে। 

প্রতিদিনই পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের বিভিন্ন অপরাধের কারণে অভিযোগ জমা পড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৫ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৫২০টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলাগুলোতে ৬৯০ জন পুলিশ সদস্য অভিযুক্ত। ২০১৮ সালে পুলিশের বিরুদ্ধে ১২৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। 

চলতি বছরে নির্যাতন করা, অপহরণ, যৌন হয়রানি, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। 

সদর দফতর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়া সদর দফতরে পুলিশের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে এমন অভিযোগে প্রায় হাজারেরও বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে বর্তমানে তদন্ত চলছে। ২০১৮ সালের পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেলে ৫ হাজার ৯১৫ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ জমা রয়েছে। যার মধ্যে গুরুতর অভিযোগ এসেছে ২ হাজার ১৭ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ কিংবা মাদক ব্যবসার মতো অভিযোগও রয়েছে। বাকি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে টাকা না পেয়ে নির্যাতন, বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া, সাধারণ মানুষকে হয়রানিসহ বিভিন্ন অসদাচরণের। 

তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৪ জনের বিরুদ্ধে। গুরুতর অভিযোগে ২০১৮ সালে মোট ৩২ জনকে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে কনস্টেবল ও এএসআই পর্যায়ের সদস্য বেশি। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে ৬৬০ পুলিশ সদস্যকে। এর মধ্যে অনেকের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বেতন স্কেলে দক্ষতাসীমা অতিক্রম বন্ধ, বেতন স্কেল নিম্ন ধাপে অবনমিতকরণ এবং কর্তব্যে অবহেলায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ বা অংশ-বিশেষ বেতন হতে আদায় করা হচ্ছে। 

২০১৭ সালে সারাদেশে ১১ হাজার ৬০৬ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করার অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেলে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৭ হাজার ১১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ বেশিরভাগই কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশের ব্যক্তিগত অপরাধ কমিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি জরুরি বাহিনীকে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নে মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ইউনিটের প্রতি দায়িত্বশীল ও নজরদারি থাকতে হবে। যখন যেখানে যে সমস্যা তৈরি হবে সে সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যাদের খারাপ মন-মানসিকতা রয়েছে তাদের খারাপ মনোভাব দূর করে পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠাবান হয়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়মিত করতে হবে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস জানান, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে পুলিশ গ্রেফতার করবে। কিন্তু অন্যায়ভাবে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করলে যে পুলিশ এ কাজ করবে দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ তার। পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পুরো পুলিশ বাহিনী বা সদর দফতর নিবে না। পুলিশ সদর দফতরে যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অপরাধের ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলো তদন্ত চলমান রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। অন্যায় করলে কোনও পুলিশ সদস্যকে এতটুকুও ছাড় দেয়া হবে না।

এইচএম/এসএমএম