• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৩:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৩:২৫ পিএম

উধাও হচ্ছে পাথর, ঝুঁকিতে পড়ছে রেল চলাচল

উধাও হচ্ছে পাথর, ঝুঁকিতে পড়ছে রেল চলাচল

গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরপ্রান্তে এবং মেইন রেল লাইনের উভয় পাশে লাইন ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে একাধিক বসতি ও দোকানঘর। একদিকে রেলওয়ের পাথর চুরির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেল লাইনের ধারণ ক্ষমতা অন্যদিকে রেল লাইনের মাটি কেটে এসব বসতবাড়ি গড়ে তোলার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে রেল চলাচল। অথচ রেল কর্তৃপক্ষের নেই কোন নজরদারি, নেই কোন শক্ত পদক্ষেপের নজির।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগের ৩নং কাচারীর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ সমস্ত অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। রেলওয়ের জায়গায় বেআইনিভাবে বসবাসকারীরা রীতিমত প্রতিমাসেই নিয়মিত মাসোহারা প্রদান করছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে।

সরেজমিন রেলস্টেশন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, উত্তর দিক রেলওয়ের প্লাটফরমের প্রায় সাথেই পূর্ব পাশে লাইনের পাশ ঘেঁষেই অবৈধ দখলদাররা ১১টি বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। এ সমস্ত বসতবাড়িতে বসবাসকারী অনেকেই খড়ের পুঞ্জ দিয়ে একাধিক গরু এবং ছাগল প্রতিপালন করছে। এ সমস্ত গরু এবং ছাগল রেল লাইনের ধারেই বেধে রাখা হয়। যা ট্রেন চলাচলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। 

অন্যদিকে, পশ্চিম পাশে একটি বিশাল গোডাউন গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে অবৈধভাবে মালামাল রাখা হচ্ছে। এছাড়া খড়ের পুঞ্জ, ধান শুকানো, ধান মাড়াই, খড় শুকানোর সমস্ত কাজ রেল লাইনের ধারে এবং প্লাটফরমেই সম্পন্ন করছে এই অবৈধ বসবাসকরীরা। এতে প্লাটফরমের যাত্রীদের হেঁটে বেড়ানো বা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করাও অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত যাত্রী মাহবুব বলেন, এই স্টেশনটি একটি মডেল স্টেশন হলেও এখানে নেশাখোর  এবং একাধিক দোকানপাট গড়ে ওঠায় নির্বিঘ্নে চলাচল অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাহবুর রহমান নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক জাগরণকে বলেন, অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন নিয়মিত এখানে হাঁটতে আসি। কিন্তু বর্তমানে রেল লাইনের ধারে বাড়িঘর, দোকানপাট এবং বহিরাগত নেশাখোর ছেলেদের আড্ডার কারনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। 
এছাড়া এই বসতবাড়ি ঘেঁষে যাওয়া রেল লাইনগুলোর মূল্যবান পাথর চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে রেল লাইনগুলো পাথর শূন্য হয়ে পড়ছে। অথচ পাথর শূন্য রেল লাইন দিয়ে রেল চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। 

রেল লাইনের পাশ ঘেঁষে অধিকাংশ এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে ইট ভেঙে খোয়া বানানো, চলাচলের জায়গাজুড়ে বাঁশহাটি, বালু, ইট স্টোক এবং শুরকি কেনাবেচার রমরমা ব্যবসা। তদুপরি রেল লাইনের এই সমস্ত এলাকায় এবং আশপাশের এলাকাজুড়েই গাঁজা, চোলাই মদ, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানা মাদক দ্রব্য বিক্রয় এবং অসামাজিক কার্যকলাপও চলছে বলে জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম সরকার দৈনিক জাগরণকে বলেন, শুধু রেলওয়ে স্টেশন এবং প্লাটফরম সংলগ্ন এলাকাই তার নিয়ন্ত্রণে। রেল লাইনের পাশের অবৈধ দখলের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রেলওয়ে ভূ-সম্পদ বিভাগের। এব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথারীতি লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগের ৩নং কাচারী অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমিন আব্দুল মোমিন মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অবৈধ দখলদারদের কাছে নিজস্ব লোক দ্বারা নিয়মিত মাসাহারা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি আরও যোগ করেন, এ সমস্ত অবৈধ দখলদারদের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের পিডাব্লিউ ও আইডাব্লিউ বিভাগের। শেষে জাগরণকে তিনি এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাপ্তরিক চিঠি দ্বারা অবগত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। 

কেএসটি