• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৬:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৬:৪৮ পিএম

কুলাউড়ায় ট্রেন ট্র্যাজেডি

ওভার স্পিডে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

ওভার স্পিডে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ওভার স্পিড ও রেললাইনের ত্রুটি’র কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে ট্রেনের ৫টি বগি খাদে পড়ে। ঘটনাস্থলেই ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫০ জন। রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে কালা মিয়া বাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুত্বর। রাতে নিহতদের লাশ ও আহতদের উদ্ধারের পর সোমবার সকাল থেকে চলছে রেল লাইন মেরামতের কাজ। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সোমবার সন্ধ্যার সাথে সাথে ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে।

সিলেট-ঢাকা, মৌলভীবাজার-ঢাকা ও হবিগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের ভৈরব এলাকায় শাবাহাজপুর তিতাস সেতুর রেলিং ভেঙে ৭ দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ঢাকাগামী যাত্রীরা। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে দিগুণ যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে আসার পরই অতিরিক্ত গতি বাড়ানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনে আসার পরপর ড্রাইভার আরো গতি বাড়িয়ে দেয়। পূর্ব থেকেই ঘটনাস্থলে কয়েকটি স্লিপারে ক্লিপ ছিল না। যার কারণে ট্রেনটি ওভার স্পিডে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্লিপারে ক্লিপ বসানোর জন্য স্থানীয়রা একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে বললেও তারা কর্ণপাত করেনি। এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী লুৎফুর রহমান রাজু চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার আহব্বান করেন। এর পরেও কোনো গুরুত্ব দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। 

সিলেট থেকে কুলাউড়ার লংলাগামী যাত্রী ফয়ছল আলী (২৫) জানান, বিকট শব্দে প্রথমে আতংকিত হয়ে অনেক যাত্রী ভয় পায়।  তিনি বলেন, প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি। অনেক সময় আটকে থাকার পর রেল থেকে নেমে দেখতে পান পেছনের দিকে ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। তখন অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসও আসে। তারা তখন বুঝতে পারেন বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেল লাইনের 
নিকটস্থ বাসিন্দা প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক মিয়া জানান, শব্দ পেয়ে আমরা এলাকাবাসী এসে আহতদের উদ্ধার করি।

স্থানীয়রা খবর পাওয়ার পরপরই ট্রেন যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য মসজিদে আহবান করেন। তখন চতুর্দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসার আগেই স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। 

তদন্ত কমিটি গঠন 
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্বাঞ্চল) মিজানুর রহমানকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি ও বিভাগীয় কর্মকর্তা মইনুল ইসলামকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রেল পথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন। 

রেলওয়ে সচিবের ঘঠনাস্থল পরিদর্শন 
রেলওয়ে সচিব মোফাজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করে তিনি বলেন, কি কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে তার কারণ উদঘাটনের জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 
কমিটির সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান, সিএসটি মাইনুল ইসলাম, সিওপিএস সুজিত কুমার। তদন্ত কমিটি ঘটনার তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

নিহতদের পরিচয় 
নিহতরা হলেন- কুলাউড়া উপজেলার আব্দুল বারির স্ত্রী মনোয়ারা পারভীন-(৪৫), সিলেট নাসিং কলেজের ছাত্রী সিলেট সদরের আব্দুল্লাপুরের আব্দুল বারির মেয়ে-(২০), একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলা আটজুড়ি গ্রামের আকরাম মোল্লার মেয়ে সানজিদা আক্তার (২০), হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার নুর হোসেনের ছেলে কাওছার হোসেন(২৬)।

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী কমিনিটি মেডিকেল অফিসার শাহানউজ্জামান জানান, চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৩ জন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক আঘাত থাকায় ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত চার জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী, বাকি একজন পুরুষ। লাশগুলোর পরিচয় পাওয়া গেছে এবং তাদের স্বজনরা হাসপাতালের মর্গ থেকে শনাক্ত করে লাশ নিয়ে গেছে। 

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মো. শাহজালালসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। নিজেরা উপস্থিত থেকে উদ্ধার ও মেরামত কাছে  তত্ত্বাবধান করেন। 

কেএসটি