• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৬, ২০১৯, ০৩:১৫ পিএম

দিন মজুর থেকে লাখপতি

নেত্রকোনার সফল লেবু চাষি আলী আমজাদ

নেত্রকোনার সফল লেবু চাষি আলী আমজাদ
নেত্রকোনার ৫ গ্রামের কৃষক ঝুকছেন লেবু চাষে- ছবি : জাগরণ

নেত্রকোনার বেশ কয়েকটি গ্রামে চাষিরা উন্নত মানের লেবু চাষে ঝুকছেন। বাগানগুলোতে প্রবেশ করলে পাতার ফাঁকে ফাঁকে ধরে থাকা অসংখ্য লেবুর নজর কড়া সবুজের সমারোহ দেখে যে কারো চোখ স্থির হতে বাধ্য। দেশীয় জাতের বারমাসী এই লেবু চাষ করে যে কেউ অনায়াসেই স্বাবলম্বী হতে পারে এজন্য তার ইচ্ছাশক্তিটাই বড়। সম্প্রতি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন লেবু চাষি আলী আমজাদ। তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আশ-পাশের বহু কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ শুরু করেছেন।

লেবু চাষ করে দিন মজুর আলী আমজাদ তার ভাগ্যের পরিবর্তন করে শূন্য থেকে আজ লাখপতি। এ সম্পর্কে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর গ্রামের বাসিন্দা আলী আমজাদ জানান,  ২০১১ সালে মাত্র ৫ হাজার টাকাকে পুঁজি করে গ্রামে-গ্রামে ফেরি করে সবজি বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার আয় থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে নিজ বাড়ির বিছড়া (আঙ্গিনায়) একমাত্র সম্ভল ২০ শতাংশ জমির মধ্যে ৪ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এলাচি দেশীয় জাতের বারমাসী লেবুর চাষ শুরু করি। সে বছর তার আয় হয় ৮০ হাজার টাকা। পরের বছর ২০ শতাংশ জমিতে লেবুর বাগান করে এখন তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্চল। ফলন ও বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় ২০ শতাংশ জমির এই লেবু বাগানে ২৫০টি গাছের প্রতিটিতে ২৫০ থেকে ৩০০ লেবু পাওয়া যায়। এভাবে ২৫০টি গাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৬২ হাজার লেবুর পাওয়া যায়।

জানা যায়, প্রতি হালি ২০ থেকে ২৫ টাকা করে এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার উপরে লেবু বিক্রি করেছেন তিনি। আশা করছেন, আরও কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এ আয়ের টাকা দিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকায় ৮ কাঠা জমি, আধা-পাকা ৩টি ঘর নির্মাণসহ ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন আলী আমজাদ। আলী আমজাদের এমন সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ গ্রাম নারায়ণ ডহর, শালদিঘা, লাঙ্গলজোড়াসহ ৫টি গ্রামের অনেক চাষি প্রতিযোগিতামূলকভাবে লেবু চাষে এগিয়ে আসছেন। জেলার হাট-বাজারে এসব লেবু ক্রেতাদের নজর কাড়ছে সহজেই।

শালদিঘা  গ্রামের (অনুসরণকারী ) চাষি নেকবর আলী বলেন, ‘কৃষক আলী আমজাদের কাছ হইতে দেখকিয়া, আমরা আশে-পাশের বহুত গিরস্থ লেবুর বাঘান করে (বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ করে) বহু টেহা-হইসা কামাইতে পারতাছি। আমি নিজেও তার দেহা-দেহি বাড়ির কাছে দেড় শতাংশ জাগায় ২ বছর ধরে লেবু করে সংসার চালাইতেছি এবং ৩০ হাজার টেহা দেয়া ৪ কাঠা জমি বন্ধক রাইখকিয়া হসল করতাছি। নারায়ণডহর গ্রামের আছিয়া বেগম কয় আমজাদের লেবু টক মিডা, খাইতে ভালাই, হেই দিন নারায়ণডহর বাজার থাককিয়া এহালি ৩০ টেহা দেয়া আনছিলাম, তার ১২ মাইসশিয়া লেবু টক মিডা,খাইতে বালা দেখকিয়া সব সময় বাজারেও পায়, বারিত পায়। দামডা লাগে বেশি আরহি। অহন সব জিনিসে বেজাল আমজাদের লেবুতে বেজাল নাইকগিয়া বললিয়া মাইনষে নেয় খুব। আর দাম দেয়া নেয় বললিয়াই আমজদ কামলা থাককিয়া বালা সুহি মানুষ’।

নেত্রকোনায় লেবু চাষে সফল কৃষক আলী আমজাদ -ছবি : জাগরণ

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান ফসল বহমুখীকরণের লক্ষ্যে উৎসাহিত চাষিদের
প্রকল্প সুবিধার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও উন্নত চাষাবাদে উৎসাহিত করলে সার্বিকভাবে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ঘটবে। তখন প্রতিটি গ্রামে-গ্রামে আলী আমজাদের মতো ভাগ্য পাল্টানোর খবর শোনা যাবে।

লেবু চাষের প্রার্চুয্য ধরে রাখতে প্রয়োজন সরকারি বে-সরকারি সহায়তা, বিশেষ করে কৃষক বান্ধব বাজার ব্যবস্থাই কৃষকদের এই উৎসাহ টিকিয়ে রাখতে পারে বলে জানান স্থানীয় চাষিরা।


একেএস