• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০১৯, ০৬:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৩০, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম

নুসরাত হত্যা মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন

নুসরাত হত্যা মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ গঠনের বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (৩০ জুন) বেলা ১১টার দিকে সব আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয়। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে রোববার মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, নুসরাতের বান্ধবী নিশাত ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তির সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল। আদালতে রোববার শুধু বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৬ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।

আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) বাকি দুজন সাক্ষী নিশাত ও ফুর্তির সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করা হবে। আদালত এদিনের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে একই দিন বেলা ১১টায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির প্রতারণা ও অপহরণের হুমকির মামলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিম সিরাজ-উদ-দৌলাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এ মামলার বাদী ছিলেন আবদুল কাইয়ুম নিশান। তিনি দারুল কোরআন মাদ্রাসা ও ডেভেলপারের পরিচালক। আগামী ৭ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী জানান।

এর আগে নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে ৭ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সব আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০ জুন মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাষ্ট্রপক্ষ মামলার নথি আদালতে উপস্থাপন করে অভিযোগ গঠনের জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেন। আসামিদের আইনজীবীরা এ মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের বৈধতার বিষয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা মামলার ধারার (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৪(১) ও ৩০ ধারা) বিষয়ে আদালতের আপত্তি জানান। পরে আসামিরা তাদের বক্তব্য শুনতে বিচারকের কাছে আরজি জানান। আদালত একে একে ১৬ আসামির বক্তব্য শোনেন। তাদের মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন।

তিনি বলেন, আদালত তাদের আবেদন মামলার নথিতে সংযুক্ত করেন। পরে আসামিদের পক্ষে আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন আদালত। আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ‘১৮০ দিনের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী হানিফ মজুমদার বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাপ প্রয়োগ করে আসামিদের জবানবন্দি নিয়েছেন। আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন করলেও আদালত তাতে সাড়া দেননি। আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। এ জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পরীক্ষাকেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে গেছেন নুসরাত। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে থাকা ১৬ আসামি হলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করেন। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে।

এছাড়া যৌন হয়রানি মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সাইবার আইনের মামলায় গ্রেফতার সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন কারাগারে রয়েছেন।

এনআই

আরও পড়ুন