• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৬, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম

জেলা সংবাদকর্মীদের উপজেলায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনওর

জেলা সংবাদকর্মীদের উপজেলায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনওর
কামারখন্দ উপজেলার ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম ছবি : জাগরণ

সরকারিভাবে গম-ধান ক্রয়, কর্মসৃজন প্রকল্প, টিআর-কাবিখা, জমি আছে ঘর নাই প্রকল্প ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের আগে স্থানীয় প্রেসক্লাবের নেতা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নেওয়া লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ইউএনও এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

এদিকে তার এমন বিতর্কিত মন্তব্যের একটি অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংবাদিকরা বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ইউএনওর দুর্নীতির সংবাদ যাতে কেউ প্রকাশ করতে না পারে, সে জন্যই এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কামারখন্দ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়াকে উদ্দেশ করে ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখানে (কামারখন্দ) বাইরের সাংবাদিক একদিনে এসে বুঝবে? যেকোনো নিগেটিভ নিউজ করলে আমার সাথে কথা বলে তারপর করবে। বাইরের সাংবাদিক যেন আমার কাছে কম আসে। আমার কথা হচ্ছে, প্রোপার চ্যানেলের মাধ্যমে আসতে হবে। বাইরের সাংবাদিক এলে নক করে আসবে।' তিনি আরও বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের কামারখন্দ উপজেলায় প্রবেশ করতে বা সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি এবং আমার (ইউএনও) কনসার্ন নিতে হবে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘গঠনতন্ত্র করেন, বাইরের সাংবাদিক বা জেলার সাংবাদিক এলে সভাপতিকে জানিয়ে প্রতিবেদন করবে, এটা গঠনতন্ত্রের মাঝে ঢোকানো আছে না? নীতিমালায় ঢোকান এইডা।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের (কামারখন্দের) সাংবাদিক রিপোর্ট করবে এদেরকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের। কামারখন্দের সাংবাদিকদের ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের। অতএব ইকোনমিক যদি কোনো ফিনান্সিয়াল দরকার হয় দিব। সমস্যা কী? আমাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মতো কোনো অভাব নাই। আছে? বিভিন্ন জায়গা আছে। আমরা ফিনান্সিয়াল সুবিধা দিব, সমস্যা আছে আপনার? বাইরের সাংবাদিক কেন এখানে আসবে।’

এদিকে ইউএনওর এমন বক্তব্যে জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কামারখন্দ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, “৫-৬ দিন আগে ইউএনও কামারখন্দের সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ে তিনি বলেন, ‘কোনো নিগেটিভ নিউজ থাকলে জেলার কোনো সাংবাদিকরা কামারখন্দে এসে নিউজ করতে চাইলে অন্ততপক্ষে উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি/সম্পাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। নিউজ প্রকাশ করার আগে উপজেলার প্রধান হিসেবে আমাকেও এ বিষয়ে অবহিত করার উচিত।’ অডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমি বিষয়টি জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতিকেও অবগত করেছি।”

সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রবিন জানান, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’

এ বিষয়ে ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার উপজেলায় কোনো নিগেটিভ নিউজ হলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অনেক সময় জবাবদিহি করতে হয়। যেহেতু সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছি, তাই কামারখন্দের যেকোনো নিগেটিভ নিউজ করার আগে জেলার সাংবাদিকদের উপজেলার প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনাসহ আমার মতামত নিলে ভালো হয়। আমি কাউকে আহত করার জন্য এমন মন্তব্য করিনি।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কামারখন্দ ইউএনওর অডিও বক্তব্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করব।’

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মাদ জানান, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে অডিওটি শুনতে পারিনি। অডিওটি শোনার পর কামারখন্দের ইউএনওর সাথে কথা বলার পর আপনাদের সাথে কথা বলতে পারব। এর আগে কিছু বলতে পারছি না।’

এনআই