সমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে হলে, শিক্ষিত রাষ্ট্রের পাশাপাশি আলোকিত মানুষ চাই। আর আলোকিত মানুষ পেতে হলে চাই সমৃদ্ধ পাঠাগার। পাঠাগার মানুষের জ্ঞানের সব দুয়ার উন্মোচন করে মানবাত্মাকে প্রজ্বলিত করে তোলে। তাই গ্রামের প্রতিটি ঘরে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা পৌঁছে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী আড়িয়া গ্রামের শিক্ষক মস্তাক আহম্মেদ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ম.আ.সরকার পল্লী পাঠাগার।‘আলোকিত মানুষ চাই, একটি গ্রাম একটি গাঠাগার’ শ্লোগানকে সামনে রেখে তিনি নিস্বার্থভাবে পল্লী পাঠাগারটি পরিচালনা করছেন।
মস্তাক আহম্মেদ জন্ম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬নং তিতুদহ ইউনিয়নের ৬২নং আড়িয়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। ৫ ভাই আর ৪ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।মেধাবী হওয়ায় পিতার কৃষি কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি শত বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে তিনি তার লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই মস্তাক আহম্মেদ নিজ গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে অশিক্ষার অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। এ লক্ষ্যে তিনি তার জমানো কিছু অর্থ দিয়ে নিজের বাড়িতেই গড়ে তোলেন ছোট একটি পাঠাগার। বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙার একটি বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন।
মস্তাক আহম্মেদ জানান, ছোটবেলা থেকেই গ্রামের প্রতিটি ঘরে শিক্ষা আলো ছড়িয়ে দিতে একটি পাঠগার নির্মাণের স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পৈতিকসূত্র পাওয়া একটি পুকুর মাটি দিয়ে ভরাট করি। এরপর বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে টিনের একটি ঘরও তৈরী করি। অল্প অল্প করে গড়ে তুলি আমার স্বপ্নের পাঠাগার।
মস্তাক আহম্মেদের বন্ধু মিজানুর রহমান জানান, পাঠাগার শুরুর দিকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলেমেয়েদের বই পড়ার সুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের জানাতাম। তারা যাতে বই পড়ায় উৎসাহ পায় সজন্য পাশাপাশি সাপ্তাহিক বই পড়ার আসর ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। প্রতিযোগিতায় যে প্রথম হয় তাকে পুরস্কার দেয়া হয়। এভাবেই আমরা শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষকে পাঠাগারমুখীি করার চেষ্টা করছি।
প্রাচীনকালের পুঁথি পাঠের মতই চলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ম.আ. সরকারের পল্লী পাঠাগারে বই পড়ার আসর। একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বসানো হয় গানের আসর। হারমোনিয়াম, ডুগি, তবলা আর বাঁশের বাঁশির মধুর সুরে যেনো হ্যামিলিয়নের যাদুর বাঁশির মত ছুটে আসে গ্রামের নারী,পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ।
পাঠাগার প্রাঙ্গণে প্রতিদিনই প্রায় সব বয়সী মানুষ বই পড়ার আড্ডায় মেতে ওঠে। বর্তমানে অনাবৃষ্টি কারণে পাঠাগারের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এজন্য মস্তাক আহম্মেদ সকলের সহযোগিতার জন্য চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করছেন।
একেএস