• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৯, ১১:০৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৯, ২০১৯, ১১:০৫ এএম

ইতিহাসের সাক্ষি কুঠিবাড়ি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে 

ইতিহাসের সাক্ষি কুঠিবাড়ি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে 
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ‘মোরেল সাহেবের কুঠিবাড়ি’- ছবি : জাগরণ

ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটেছে কালের বির্বতনে। তবে তাদের শোষণ-নির্যাতনের স্মৃতি এখনো রয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব স্থানের মধ্যে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ‘মোরেল সাহেবের কুঠিবাড়ি’ অন্যতম। 

পানগুছি নদীর পশ্চিম তীরে সরালিয়া খালের দক্ষিণ পাশে গড়ে ওঠে একটি কেন্দ্র। বন আবাদ করে গড়ে তোলা হয় ‘কুঠিবাড়ি’। এতে নির্মিত হয় আস্তাবল, পিলখানা, নাচঘর, গুদামঘর, কাচারিবাড়ি, নির্যাতন কক্ষ ও লাঠিয়াল বাহিনীর জন্য পৃথক ঘর। কুঠিবাড়ির চারিদিকে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। 

ইংরেজ শাসক রবার্ট মোরেলের পরিবার বাস করতো এই কুঠিবাড়িতে। সুন্দরবন ইজারা নিয়ে শুরু করেন নীল চাষ। মোরেলের দুই ছেলের মধ্যে রবার্ট মোরেল ছিলেন শান্ত প্রকৃতির। পক্ষান্তরে হেনরি মোরেল ছিল বদমেজাজি। হেনরি তার ম্যানেজার হেলির সহযোগিতায় স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালাতে থাকে। 

এ সময় সুন্দরবন অঞ্চলের কৃষক নেতা জাহাঙ্গীরের ছেলে রহিমুল্লাহ (মতান্তরে রেহেমুল্লাহ) ইংরেজি শেখার জন্য কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে তিনি পরিচিত হন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রের সঙ্গে। কিন্তু নিজের এলাকায় ইংরেজদের অত্যাচার ও নিপীড়নের কাহিনী জানার পর তিনি ইংরেজি শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি বঙ্কিম চন্দ্রের আপত্তি সত্ত্বে এলাকায় ফিরে আসেন এবং নিজের আট ভাই ও সঙ্গীদের নিয়ে ১৪০০ বিঘা জমি আবাদ করেন। ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন ঐক্য। নির্যাতিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদমুখর হন তিনি। রুখে দাঁড়ান অন্যায়, অত্যাচার আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এতে পরাজিত হতে থাকে মোরেল বাহিনী। 

১৮৬১ সালের ২৫ নভেম্বর শেষ রাতে এলাকা দখলের এক লড়াইয়ে মোরেল বাহিনীর হাতে নিহত হন এই অঞ্চলের ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ, বীর যোদ্ধা রহিমুল্লাহ। বিশ্বাসঘাতক সহযোগী প্রতিবেশী গুনী মামুন ও ইংরেজদের কূটকৌশলের কাছে অবশেষে হার মানতে হয় মোরেলগঞ্জের প্রবাদ পুরুষ রহিমুল্লাহর। 

খবর পেয়ে রহিমুল্লাহর সহপাঠী তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিম চন্দ্র ছুটে আসেন ব্যাগ্রবীরের বাড়িতে। তিনি রহিমুল্লাহ হত্যা মামলাও করেন। কিন্তু বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগেই মন্দা নেমে আসে নীল ব্যবসায়। ফলে এলাকা ছেড়ে চলে যায় হত্যাকারী ইংরেজ পরিবারটি। 

ইতিহাসের সাক্ষী সেই কুঠিবাড়ি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। সুন্দরবনের সঙ্গে সরাসরি স্থলপথে যোগাযোগের সুযোগ এবং কুঠিবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ থাকা সত্ত্বে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে পিছিয়ে রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাসের অধিকারী এই জনপদ। 

অন্যদিকে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে আত্মাহুতি দেয়া রহিমুল্লাহর নামানুসারে মোরেলগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে রহিমগঞ্জ বা রহিমনগর করার জন্য মোরেলগঞ্জবাসীর দাবি পূরণ হয়নি আজও।

কেএসটি