• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০১৯, ০১:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৯, ২০১৯, ০২:১৪ পিএম

তিন বছর পর জামিনে কারামুক্তি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আশায় ঢাকার পথে রানা  

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আশায় ঢাকার পথে রানা  
জামিনে কারামুক্ত সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা

প্রায় তিন বছর পর জামিনে কারামুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার পথে সাবেক এমপি রানা। দুই হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পান টাঙ্গাইলের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেলার আবুল বাশার জানান, জামিনের কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে রানাকে মুক্তি দেন তারা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, কারাগার থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আশায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন রানা।

এদিকে, তার জামিনকে কেন্দ্র করে কারাগার এলাকায় পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। 

জামিন পাওয়ার পর আমানুর রহমান খান রানা বলেন, ‘আমি এখন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য যাবো। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবো। শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখানে রাজনীতি করেছি এবং টাঙ্গাইল রাজনীতি শেখ হাসিনার নির্দেশেই হবে।’  

এর আগে সোমবার টাঙ্গাইলের দুই যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সোমবার এ আদেশ দেন। এর ফলে রানার কারামুক্তিতে আইনগত বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর আগে হাইকোর্ট এই মামলায় রানাকে জামিন দেন। ওই জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

এর আগেও টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায়ও তিনি জামিন পান। 

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর রানা গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বেশ কয়েক দফা উচ্চ আদালত ও নিম্ন-আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।  

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে এবং ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রানা (তখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন) ও তার তিনভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।  

তদন্ত চলাকালে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার ঘনিষ্ঠ কর্মী আনিসুর রহমান রাজা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিন দফায় মোট ১৫ দিন রিমান্ড শেষে ওই বছরের ২৭ আগস্ট টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেনের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অপর আসামি মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন একই বছরের ২৪ আগস্ট। তিনি দশ দিনের রিমান্ড শেষে ৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। উভয় আসামির জবানবন্দিতে ফারুক আহমদ হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক এই এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করলে এই হত্যাকাণ্ডে সাথে খান পরিবারের চার ভাইয়ের জড়িত থাকার কথা প্রথম প্রকাশ পায়। এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে আমানুর রহমান খান রানার অপর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তদানীন্তন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও টাঙ্গাইল জেলা বণিক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাকন যুক্ত বলে মোহাম্মদ আলী তার জবানবন্দিতে প্রকাশ করেন। গত ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। বর্তমানে মামলার সাক্ষিগ্রহণ চলছে। 

অপরদিকে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাদের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন। ঘটনার পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি জিডি করেন। এর এক বছর পর ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গ্রেপ্তা হন বিশ্বাস বেতকা এলাকার খন্দকার জাহিদ, শাহাদত হোসেন, হিরন মিয়া। তারা আদালতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন এমপি রানার দিক নির্দেশনায় যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে রানাকে বাদ দিয়ে তার পিতা আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। আতাউর রহমান খান দলের মনোনয়ন পেয়ে এবাবের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন। 

কেএসটি