• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:৩৭ এএম

গৃহকর্মীকে অমানবিক নির্যাতন 

লিমার সারা শরীরে ইস্ত্রি, খুন্তির গরম ছ্যাঁকা   

লিমার সারা শরীরে ইস্ত্রি, খুন্তির গরম ছ্যাঁকা   
নির্যাতিত লিমাকে হাসপাতালে দেখতে যান হালুয়াঘাট থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস- ছবি : জাগরণ

‘আন্টি আমারে টেকাটা দিয়া দেন, আমি বাড়ি যাবগা। আমি আপনার বাসায় থাকবো না। এই কথা বলার কারণে উনি, উনার ছেলে আর মেয়ে মিলে আমারে আইরনের ছ্যাঁকা লাগাইছে। সব জায়গাতেই ছ্যাঁকা দিয়েছে। আমার মাথার মাঝে খুন্তি দিয়া বাইরাইছে। খুন্তি গরম কইরা ছ্যাঁকা দিছে। হাতের মাঝে লোহার পাত দিয়া বাইরাইছে। পাকার মাঝে হাত রেখে ওরা আমারে বাইরাইছে। পায়ের মধ্যে বাইরাইছে। প্লাস দিয়া আমার হাতের নখ উঠাইয়া ফেলছে। দাঁত তুইলা ফেলছে।’ বুধবার ঠিক এইভাবেই অভিযোগগুলো করেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দর্শারপাড় গ্রামের হাবিবুর রহমানের ১৫ বৎসরের কিশোরী মোছা. লিমা আক্তার। 

লিমা বলেন, স্থানীয় আছিয়া খাতুন নামে এক মহিলার মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে গত চার মাস পূর্বে ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট কচুক্ষেত এলাকার চৈতালি ১/ডি নামে এক বাসায় গৃহকর্মী হিসাবে কাজে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই নানা অজুহাতে তার ওপর নির্যাতন চালাতেন ঐ বাসার গৃহকত্রী মীম ওরফে মাহি (৪৫), ছেলে ওয়াদা ও কাজের আরেক মেয়ে পিংকি মিলে ওরা তিনজন। 

হাসপাতালে ভর্তি নির্যাতিত লিমা- ছবি : জাগরণ

নির্যাতিত কিশোরী বলেন, আমি টেকা চাইলেই আমাকে মারে। গত ঈদের দিন রাতে আমারে মাইরা চুল ছিলছে। পরে আমার মাথা ফাটাইছে। আমি বলছি, আমার মাথা থেকে অনেক রক্ত বের হইতেছে, আমারে হাসপাতালে নিয়া যান, নিয়া যায় নাই। তারপর তালা দিয়া ভাইরাইয়া আমার একটা দাঁত ভেঙে ফেলছে, আরেকটা অর্ধেকটা ভেঙে গেছে। আমি আসার দিন আমার মাথায় বাড়ি দেয়। তারা আইরন গরম করে, পরে আমার পিঠে, হাতে, শরীরে, লজ্জাস্থানে ছ্যাকা দেয়। 

লিমা অভিযোগ করে আরও বলেন, গত রোজার মাসটা পুরাটাই আমারে ওরা অত্যাচার করছে। রোজার মাঝে আমি রোজাও রাখছি, পিটনাও খাইছি। এমনকি ওরা আমারে ঠিকমতো খাইতেও দেয় নাই।  আমি বলছি ভাত খাবো, ওরা খাইতে দেয় নাই। ঠিকমতো ইফতারও করতে দেয় নাই। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত নারীকে মুঠোফোনে কল করলে তার খালাতো ভাই কাজল ফোন রিসিভ করে উলটো লিমার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেন। লিমাকে নির্যাতন করেছেন এমনটা অস্বীকার করে বলেন, লিমা নিজেই নিজের শরীরে আইরন, খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দিয়েছেন। নিজের শরীর ক্ষতবিক্ষত করেছেন লিমা নিজেই। এ বিষয়ে কোনো কথা বলবে না বলে কাজল জানান। 

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিত লিমাকে দেখেছি। কিশোরির সারা শরীরে আঘাত ও নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। 

লিমার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার মুশফিকা বলেন, লিমার সারা শরীরেই নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। 

কেএসটি