• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম

ধর্ষণ মামলায় মেয়রপুত্রের জামিন বাতিল, ফের কারাগারে

ধর্ষণ মামলায় মেয়রপুত্রের জামিন বাতিল, ফের কারাগারে
জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুস বেপারীর ছেলে মাসুদ বেপারী - ছবি : জাগরণ

শরীয়তপুরে কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় প্রধান আসামি জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুস বেপারীর ছেলে মাসুদ বেপারীর জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর ২টায় তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

গত ৮ জুলাই মামলা দায়েরের মাত্র ৮ দিনের মাথায় একই আদালতের একজন ভারপ্রাপ্ত নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদকে অন্তর্বর্তীকালিন জামিন দিয়েছিলেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ভুক্তভোগীর পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিলেন মাসুদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলেজছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। এদিকে অভিযুক্ত মেয়রের ছেলেকে জামিন দেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়ার পাশাপাশি ফুঁসে উঠেছিল শরীয়তপুরের সুশীল সমাজ।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১০ জুলাই) শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শরীয়তপুর জেলা মানবাধিকার কমিশন, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসডিএস, নুসা এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা মাসুদের জামিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। বৃহস্পতিবার মাসুদ আদালতে হাজির হলে আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ভিকটিম নিজে ও তার মা-বাবা।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন বিকেলে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ বেপারীর বিবাহিত পুত্র মাসুদ বেপারী হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের এক কলেজপড়ুয়া ছাত্রীকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নিজের বুদ্ধি আর সাহসিকতার জোরে মেয়েটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

বিষয়টি রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে মাসুদ বেপারীকে রাত আড়াইটার দিকে আটক করা হয়। ৩০ জুন দুপুরে ওই মেয়েটি ও তার বাবা জাজিরা থানায় হাজির হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ১ জুলাই ধর্ষক মাসুদকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

৭ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাসুদের জামিন প্রার্থনা করেন তার আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ মাসুদের জামিনের বিরোধিতা করে ৭ দিনের রিমান্ড দাবি করে। কিন্তু আদালত মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড আবেদটিও নামঞ্জুর করেন। ৮ জুলাই মাসুদের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনরায় মাসুদের জামিন আবেদন করলে একজন নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ) মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী ধর্ষক মাসুদকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। এদিকে ধর্ষক মাসুদ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকদের মাধ্যমে ভয়ভীতি এবং চাপ দিয়ে আসছে।

ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল মেয়েটির পরিবার। এরপর ১০ জুলাই দুপুরে জাজিরা থানায় ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা এবং মামলার বাদী নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

মাসুদের জামিন বাতিল হওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা ও মা জানান, কুদ্দুছ মৃধা নামের এক ব্যক্তি অপরাপর আরো আট-দশ জন ব্যক্তিকে নিয়ে ৮ তারিখ রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। তাদের ভয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতর পালিয়ে থাকেন। পুনরায় ১০ জুলাই কুদ্দুছ মৃধা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। ফলে তারা জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মাসুদের জামিন বাতিল হওয়ায় তারা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং মাসুদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

এনআই

আরও পড়ুন