• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম

কুলাউড়ায় কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

কুলাউড়ায় কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল
কুলসুমা বেগম তাসলিমা - ছবি : জাগরণ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল কালামিয়া বাজারের একটি বাসায় প্রেমিকের সাথে গোপনে দেখা করতে যায় স্কুলড্রেস পরিহিত কুলসুমা বেগম তাসলিমা (১৭) নামের এক কিশোরী। এ সময় স্থানীয় গ্রাম পুলিশসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রেমিকযুগলকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গ্রাম পুলিশের মারফতে মেয়েটিকে তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন স্থানীয়রা। প্রেমিক স্থানীয় নওমুসলিম আব্দুল আজিজ। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই)।

ওইদিন বিকালে হঠাৎ কিশোরীকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। রাতে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাসলিমার মৃতদেহ নিয়ে আসেন তারা। স্থানীয়দের জানানো হয়, তাসলিমা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। পরের দিন শুক্রবার (৫ জুলাই) এলাকায় মাইকিং করে বেলা ১১টায় তাকে দাফন করা হয়। ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হলেও স্থানীয়রা কিছু বোঝে ওঠার আগেই দাফন সম্পন্ন হয়।

তাসলিমার পরিবার হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করলেও স্থানীয় লোকজন তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও তোলপাড় চলছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রেমঘটিত কারণে পরিবারের লোকজনের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যু হয়েছে স্কুলছাত্রীর।

বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা। জন্মনিবন্ধন অনুসারে তার জন্মতারিখ ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। স্থানীয় লোকজন জানান, ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক ১১টায় স্কুলড্রেস পরিহিত ও স্কুলব্যাগসহ তাসলিমা বরমচাল রেলস্টেশন সংলগ্ন কালামিয়ার বাজারের একটি বাসায় প্রেমিক নওমুসলিম আব্দুল আজিজের সাথে দেখা করতে যায়। বিষয়টি বাজারবাসীর সন্দেহ হলে গ্রাম পুলিশ কয়ছর মিয়াসহ ব্যবসায়ীরা ওই বাসায় যান। বাসায় গিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার পর ব্যবসায়ীরা গ্রাম পুলিশ কয়ছর মিয়াকে দিয়ে তাসলিমাকে মহলাল (রফিনগর) গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

মহলাল (রফিনগর) গ্রামের লোকজন জানান, সকালের ঘটনার পর বিকাল আনুমানিক ৫টায় একটি অটোরিকশায় করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ির লোকজন তাসলিমাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আবার ফেরত আসেন। আসার পর এলাকার মানুষকে জানানো হয়, তাসলিমা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। পরদিন শুক্রবার এলাকায় মাইকিং করে বেলা ১১টায় দাফন করা হয়।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া এবং পুলিশকে অবহিত না করে তাসলিমার লাশ দাফন করা হয়। তাসলিমার লাশ দেখা মহিলারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাসলিমার গালে আঁচড় এবং গলায় আঙুল দেবে যাওয়ার চিহ্ন সুস্পষ্ট ছিল। লাশের ময়নাতদন্ত হলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাসলিমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হবে বলে ওই মহিলারা জানান।

নওমুসলিম আব্দুল আজিজ (মুসলিম হওয়ার আগের নাম লিটন দাস) জানান, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। কাজের সুবাদে তাসলিমাদের বাড়িতে যাতায়াত এবং ঘনিষ্ঠতা। সেই সুবাদে গত ২ বছর থেকে তাসলিমার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আব্দুল আজিজের সাথে তাসলিমাদের পরিবারের সদস্যদের সখ্য গড়ে ওঠে। তাসলিমার প্রেমে আসক্ত হয়ে আব্দুল আজিজ ৬ মাস আগে অর্থাৎ গত মাঘ মাসে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হন। তাসলিমার মা মারা যাওয়ার আগে ৪ দিন তার সাথে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে সর্বক্ষণ ছিলেন। তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন স্ত্রীর মৃত্যুর পর দেশে ফিরে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আব্দুল আজিজ তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। চিকিৎসা ব্যয়ভারও বহন করেন। তার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছে তাসলিমার পরিবার। তাসলিমার সাথে আব্দুল আজিজের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে জহুর উদ্দিন দুজনকে মারপিটও করেন। এর পর থেকে উভয়ের দেখা-সাক্ষাৎ কমে যাওয়ায় ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তাসলিমা বাজারে আসে আব্দুল আজিজের সাথে দেখা করতে। তাসলিমার মৃত্যুর পর হতাশ আব্দুল আজিজ জানান, আমি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি তাসলিমার জন্য। তাসলিমার পরিবার খুবই উগ্র। এতে তিনি খুব আতঙ্কে আছেন। তবে তাসলিমার বড় বোন ও ভাই হাবিবুর রহমান রাহাতকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

বরমচাল ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ কয়ছর মিয়া জানান, কালামিয়ার বাজারের পাশে আব্দুল আজিজের ভাড়াটিয়া বাসায় তাসলিমাকে পাওয়ার পর তার চাচা জয়নাল মিয়াকে ফোন দিই। তিনি তাসলিমাকে বাড়িতে নিয়ে দেয়ার কথা বলেন। আমি তাসলিমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। কিন্তু বিকালে শুনি তাসলিমা স্ট্রোক করে মারা গেছে। এটা কী করে সম্ভব?

নিহত তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ফিরে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার আসরের পর ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ২-৩ দিন পর পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। ওইদিন কালামিয়ার বাজারে কী ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এনআই

আরও পড়ুন