• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০১৯, ১১:৪৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৮, ২০১৯, ১১:৪৩ এএম

পদ্মা-যমুনায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধি 

মানিকগঞ্জে নদী ভাঙনের সঙ্গে বন্যার আশঙ্কা

মানিকগঞ্জে নদী ভাঙনের সঙ্গে বন্যার আশঙ্কা

উজান থেকে পানি নেমে আসায় মানিকগঞ্জের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এরইমধ্যে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর এ চারটি উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকায়  নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামঞ্চলের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ছে ফসলের মাঠ। উক্ত এলাকার চরাঞ্চলের নিচু বাড়িতে পানি উঠেছে। আবার অনেক লোকজনের বাড়িতে পানি উঠার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরিচা অফিসের পানি পরিমাপক মো. ফারুক আহম্মেদ জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

জানা গেছে, নদীতে  পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার নিচু ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। মানিকগঞ্জে পদ্মা-যমুনা ও ধলেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চারটি উপজেলায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো হচ্ছে, শিবালয় উপজেলার শিবালয়, তেওতা ও আরুয়া ইউনিয়ন ও দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা, বাঘুটিয়া,  চরকাটারি ও খলসী ইউনিয় ও হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, ধুলসুরা, লেছড়াগঞ্জ ও বয়ড়া ইউনিয়ন এবং ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া, বানিয়াজুরী, পয়লা, সিংজুরী, ঘিওর সদর ইউনিয়ন।
নদী ভাঙনের কারণে শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের গোয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আরুয়া ইউনিয়নের কুষ্টিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে। যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আতংকের মধ্যে ক্লাস করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আরিচা বন্দর ও আরিচা-কাশাদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নিহালপুরের অংশ এবং আরিচা নদী বন্দর, শিবালয় বন্দর বাজার হুমকির মুখে।    
শুষ্ক মৌসুমে নদীর গতিপথে চর জেগে ওঠায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী স্থান দিয়ে তীব্র স্রোতে বয়ে যাওয়ায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের জানান, তেওতা ইউনিয়নে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। যমুনায় নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ছে। আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু এলাকার কিছু কিছু বাড়িতে পানি উঠেছে। তবে যেভাবে পানি বাড়ছে  এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে খুব দ্রুতই চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি উঠবে বলে তিনি জানান। 
শিবালয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু বলেন, গত ১৩ জুলাই পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শিবালয়ের নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ভাঙন রোধে তাৎক্ষনিক তিনি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন এবং জরুরি ভিত্তিত্বে কাজ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন। কিন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড অদ্যবদিও জরুরি ভিত্তিত্বে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেনি বলে তিনি জানান। 
এদিকে, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে শিবালয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিত্বে যে কোজটি করবে তা তদারকি করার জন্য উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এ তদারকি কমিটির কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজে ফাঁকি দিতে পারবে না বলেই তারা ধীর গতিতে কাজ করছে বলে তিনি মনে করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মাওলা মেহেদী হাসান বলেন, জেলার শিবালয়-দৌলতপুর ও হরিরামপুর তিনটি উপজেলার জরুরি কাজগুলো জেলা ও উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজগুলো করার জন্য ইতমধ্যে ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে চর ডুবে যাওয়ায় বালু সংগ্রহ করা যাচ্ছেনা। জিও ব্যাগের সংকট রয়েছে। জিও ব্যাগ ওয়ার্ডার দিলে আসতে ৫/৭ দিন সময় লেগে যায়। এসব কারণে কাজ শুরু করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করা হলে খুব তাড়াতাড়িই  কাজ শুরু করবে বলে তিনি জানান।     

মানিকগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বাবুল মিয়া জানান, বন্যা এবং নদী ভাঙনের ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে মানুষের জানমালের ক্ষতি রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতমধ্যে দৌলতপুর ও সাটুরিয়া উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় ৮ মেট্রিক টন চাল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শিবালয়, ঘিওর ও হরিরামপুর প্রতি উপজেলার জন্য ২০ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্ধ দিয়ে রাখা হয়েছে। ওগুলো যে কোন সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা থেকে বিতরণ করা হবে। জেলা ও প্রত্যেক উপজেলাতেই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, মেডিক্যাল টিম, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বন্যাকবলিত লোকজনদেরকে উদ্ধারের জন্য নৌকা প্রস্তুত রাখাসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।  
    
কেএসটি