• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম

বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল

স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আপস করে ক্ষমতায় গেছে আ‍‍`লীগ

স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আপস করে ক্ষমতায় গেছে আ‍‍`লীগ
বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা  -  ছবি : জাগরণ

বিএনপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আপস করে ক্ষমতায় গেছে। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছেন। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যিনি লড়াই করেছেন, সেই নেত্রীকে কারান্তরীণ করে রেখেছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকালে বরিশাল নগরীর বান্দ রোডস্থ হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেছেন।

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা নজিরবিহীন। সরকার এ দেশকে নারকীয় দেশ করে রেখেছে, বসবাসের অনুপযোগী দেশ করে রেখেছে। সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের এক লাখের ওপর মামলা দিয়েছে। এক হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার সব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করছে। যে কারণে শত চেষ্টার পরও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিচ্ছে না। আজ আমরা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন অধিকার রক্ষায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর সালে ক্ষমতায় এসে বাকশাল কায়েম করেছিল। সেই দল পুনরায় ক্ষমতায় এসে লুকোচুরির মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। তাই আজ দেশে শিশু থেকে একশ বছর বয়সী নারীও ধর্ষিত হচ্ছে। আদালতে বিচারকের সামনে খুন হচ্ছে। জনগণ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কী বিচার চাইবে?

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার আমলাদের মাধ্যমে লুকোচুরির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। সে জন্যই আজ আমলাদের খুশি করার বাজেট করেছে। কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অথচ সরকারি আমলাদের দিন দিন বেতন বাড়ছে। এ সরকার আর বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা (বিএনপি) নিয়মতন্ত্রে বিশ্বাসী, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। সে জন্যই আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কী হলো, ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর রাতেই লুকোচুরি করে শেষ করেছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে তাদের কথায় আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিলাম। কিন্তু ক্ষমতায় বসে তারা তা দেয়নি। কারণ তারা জানে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ একটি ভোটও পাবে না।’

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন। তাকে মুক্ত না করলে আপনারাও রেহাই পাবেন না। কারণ তিনি মুক্তি না পেলে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। কারান্তরীণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বরিশাল থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, ‘বরিশালের সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। এ ঢল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ঢল। এদের সবার দাবি একটাই স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।

তিনি বলেন, দেশ আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এক ধর্ষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিচারবিহীন হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, শিশু-কিশোরদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এ সরকারের লোকজন তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

বিভাগীয় সমাবেশের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বরিশাল থেকে আন্দোলনের শুরু করেছি। অতিসত্বর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। শুধু মানববন্ধন এবং সভা করে অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের মুক্তি সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন রাজনীতির সিস্টেম চেঞ্জ করতে হবে।’

বিভাগীয় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহেমদ বীর বিক্রম, এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুছুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নু।

বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারের সঞ্চালনায় বিভাগীয় সমাবেশে বরিশালের ছয় জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেন। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এনআই

আরও পড়ুন