• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৯, ০৮:৫১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২০, ২০১৯, ০৮:৫১ এএম

বিদ্যালয়ের ভবন ধস আতঙ্কে শিশু শিক্ষার্থীরা

বিদ্যালয়ের ভবন ধস আতঙ্কে শিশু শিক্ষার্থীরা

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ বহুলী ইউনিয়নের সুপ্রাচীন শিশু শিক্ষার সরকারি প্রতিষ্ঠান ১০৯নং চর কালিদাসগাঁতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ভবন ধসের আতঙ্ক ও শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে পাঠদান চলছে। প্রতিদিন ছাদের প্লাস্টার ও খোয়া ভেঙে পড়ছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। 

বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা ও টিনসেড ঘরও ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় যেকোন সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকরা থাকেন চরম উৎকণ্ঠায়। স্কুলের শিক্ষকেরা দায়িত্ব পালন করলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরাজ করছে ছাদ ধসের আতঙ্ক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকরা সারাদিন বিদ্যালয়ে ৬শ শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২১ সালে এলকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের উদ্যোগে দানশীল ব্যক্তিদের অনুদানে ৩৩ শতাংশ জায়গার উপর চর কালিদাসগাঁতী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অনেক সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর যে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি এখন পরিত্যক্ত। ১৯৯২ সালে একটি টিনসেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল সেটির অবস্থায় খুবই নাজুক। গত কয়েক বছর যাবত এই ভবনে শিক্ষাক্রম পরিচালনা বন্ধ রয়েছে। ২০০৩ সালে একটি ৪ কক্ষের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিন ছাদের প্লাস্টার ও খোয়া ভেঙ্গে পড়ছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬শ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এখানে ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। ১৪ জনের ১২ জন নারী শিক্ষিকার জন্য নেই বসার কক্ষ। এমনকি টয়লেট পর্যন্ত নেই। দ্বিতল ভবনে মাত্র ১টি টয়লেট রয়েছে। সেটিও ব্যবহার অনুপযোগী। নারী শিক্ষকরা পাশের বাড়িতে গিয়েই জরুরি কাজ সমাধা করেন। আসবাবপত্রের সংকট তীব্র। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের বসার বেঞ্চের অভাব তীব্র। 

চর কালিদাসগাঁতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, জরাজীর্ণ ভবনটি নিয়ে তিনি প্রতিদিন দুঃশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে স্কুলে আসেন। কখন ছাদ ধসে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এই বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো নিয়ে বারবার পত্র দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও কোন কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষ কেন এই স্কুলের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাও বুঝতে পারছি না। 

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ। 

বহুলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠদান করছে। স্কুল ভবনের অবস্থা বহুবছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোন নিরাপদ স্থানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর অনুমতি এবং ব্যবস্থা নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে স্কুল ভবনটি ধসে পড়বে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আপেল মাহমুদ বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ স্বীকার করে বলেন, ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র পাঠানো আছে। আশা করছি অচিরেই সেখানে ভবন বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

কেএসটি

আরও পড়ুন