• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৯, ০৯:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৬, ২০১৯, ০৯:৪৮ এএম

বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজের পণ্য এখন বিশ্বের ৪০ দেশে 

বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজের পণ্য এখন বিশ্বের ৪০ দেশে 

জেলার রায়পুরের রাখালিয়া এলাকায় বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা অবস্থিত। এ কারখানায় উৎপাদিত সু বর্তমানে বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাটি স্থাপনের আগে ওই জায়গায় ‘নোয়াখালী টেক্সটাইল মিল’ ছিল। লোকসানের কারণে ওই করাখানাটি ১৯৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৪ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটি কিনে নেন রায়পুরের স্থানীয় বাসিন্দা আলী হায়দার চৌধুরী। একই বছরের জুলাইয়ে ১৫ দশমিক ৭৩ একর ভূমিসহ নতুন মালিককে কারখানার দখল বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। মালিকানা চুক্তি সম্পাদন হয় ২০০৬ সালের ৭ জুন। প্রথমে শর্ত ছিল, টেক্সটাইল মিলই চালু করা। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহও ছিল অপ্রতুল। এ কারণে বেসরকারিকরণ কমিশন থেকে জুতা বা অন্য শিল্প স্থাপনের অনুমতি নেন নতুন মালিক।

সূত্রে আরও জানা গেছে, কারখানার মালিকপক্ষ জুতা উৎপাদনের ব্যবসায় নামার আগে ১৯৮৩ সাল থেকেই মেসার্স বেঙ্গল লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রফতানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফলে জুতা উৎপাদন ও রফতানি শুরু করে বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কারখানাটিতে বাণিজ্যিকভাবে জুতা উৎপাদন শুরু হয় ২০১০ সালে। কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয় ৩০০ শ্রমিক নিয়ে। প্রথমবারেই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হয় কারখানাটি। এখানে উৎপাদিত জুতা বায়ারদের মাধ্যমে শুধু বিদেশে রফতানি করা হয়। 

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, কারখানায় আটটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। কোনো বিভাগে নতুন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কোনো বিভাগে হচ্ছে কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণ। কোথাও আবার শ্রমিকরা জুতা উৎপাদন করছেন হাতে ও মেশিনে। কোথাও আবার বিদেশি বায়াররা নিজেরা উপস্থিত থেকে অর্ডারকৃত জুতার মান বুঝে নিচ্ছেন।

জুতার কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা 


কারখানার শ্রমিক আয়েশা, সালমা ও আকলিমা জানান, এখানে কাজ করে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। কাজ করে যে বেতন পান, তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহের পরও সঞ্চয় করা সম্ভব হচ্ছে। এটি লক্ষ্মীপুরের একমাত্র শিল্প কারখানায় হওয়ায় এখানে স্থানীয় গরিব মানুষরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।
 
কারখানার ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম জানান, কারখানায় বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ১০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে। এদের অধিকাংশই স্থানীয় অসহায়-দুস্থ ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী। নিরাপদ, দূষণমুক্ত ও শ্রমিকবান্ধব পরিবেশে কাজ করছেন তারা। শ্রমিকের দুপুরের খাবার সরবরাহের পাশাপাশি কারখানার অভ্যন্তরেই রয়েছে চিকিৎসার সু ব্যবস্থা। এছাড়া অগ্নিঝূঁকি মোকাবেলায়ও প্রতিটি বিভাগের রয়েছে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বর্তমানে আটজন বায়ারের মাধ্যমে ৪০টি দেশে জুতা রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে একজন বায়ারই ২৯টি দেশে জুতা রফতানির কাজ করছেন। 

তিনি আরও বলেন, কারখানাটির উৎপাদিত জুতা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, জাপান, জার্মানি, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ভারত, চীন, ফ্রান্সসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে। বর্তমানে কারখানাটির বার্ষিক টার্নওভার ৬০-৭০ কোটি টাকা। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও আরো দুই হাজার শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বিপ্লব পাল জানান, এখানকার অধিকাংশ শ্রমিক নারী। কারখানায় তাদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও শিশুসন্তানদের জন্য ডে কেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিও দেয়া হয়।

বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানাটি আমার বাবা আলী হায়দার চৌধুরীর স্বপ্ন। তিনি চেয়েছিলেন শিল্প-কারখানা স্থাপন করে নিজ জেলার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ গরিব। তাদের কর্মসংস্থান করতে গিয়ে প্রথমে লোকসান দিয়ে কারখানাটি ক্রয় করি। বর্তমানে এখানে প্রায় ১ হাজার ১০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই স্বামী পরিত্যক্তা নারী। বর্তমানে এখানে অত্যাধুনিক মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এতে আরো দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া রফতানির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও পণ্য বাজারজাতের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে।
বিএস