• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০১৯, ১১:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৮, ২০১৯, ১১:৩৮ এএম

মৌলভীবাজারে শিক্ষার হালচাল

একদিনে অনুপস্থিত ১৯ শিক্ষক

একদিনে অনুপস্থিত ১৯ শিক্ষক

মৌলভীবাজার সরকারি ও মহিলা কলেজের শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে ভেঙে পড়ছে পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষকরা ছুটি না নিয়েই কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। কলেজে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক নিজের ইচ্ছা মতো কলেজে আসছেন আবার নিজের ইচ্ছায়ই চলে যাচ্ছেন। 

নাম গোপন রাখার শর্তে মহিলা কলেজের একজন শিক্ষক জানান, কেউ কেউ আবার মাসে ২/১ দিন আসেন। ঢাকা থেকে সকালে এসে ক্লাস করে রাতে সার্কিট হাউজে থেকে পরের দিন আবার চলে যান। ওই শিক্ষকরা নাকি মন্ত্রী ও সচিবের লোক বলে দাবি করেন। এ নিয়ে কলেজে নানা গুঞ্জন রয়েছে এবং কেউ সাহস করেও তাদরে কিছু বলতে পারছেন না। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা ফলাফলের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব, সময়মতো ক্লাসে না আসা, বাণিজ্যিক মনোভাব ও ক্লাসের সময় কোচিং পড়ানোর কারণেই এমনটি হচ্ছে। 

এদিকে, এই মহল ফলাফল খারাপ হওয়ার জন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও দায়ী করছেন। তারা বলেন, অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাসের সময় ফাস্ট ফুডের দোকান কিংবা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, ক্লাসের সময়ে পৌর পার্কে ফুচকার স্টলে বসে সময় পার, স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার, ক্লাসে সময় টিউশনি করানো, কোচিংয়ে পড়া এবং ক্লাসে অমনযোগী থাকে।

সরেজমিন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে গেলে দেখা যায়, শিক্ষক আব্দুল বাশের ও জুবায়ের আহমদ এখনও আসেননি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে অপর একজন শিক্ষক বলেন, উভয়ই ছুটিতে আছেন। ১১.১১ মিনিটে ইংরেজি বিভাগে গেলে দেখা যায়, বিভাগীয় প্রধান নাজমিন ইসলাম চৌধুরী এখনও অফিসে আসেননি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে একজন অফিস সহকারী বলেন, ম্যাডাম রাস্তায় আছেন আসতেছেন। ১১.২৫ মিনিটে অর্থনীতি বিভাগে গেলে দেখা যায় বিভাগীয় প্রধান আকমল হোসেন এখনও আসেননি। ১১.৩৫ মিনিটে বাংলা বিভাগে গেলে দেখা যায়, বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আলী হোসেন এখনও আসেননি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে এক শিক্ষক বলেন, উনি ঢাকায় ছুটিতে আছেন। কত দিন যাবত ছুটিতে আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষক বলেন, সপ্তাহ খানেক যাবত। ওই বিভাগের আরেক শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামও অনুপস্থিত রয়েছেন। ১১.৫০ মিনিটে দর্শন বিভাগে গেলে দেখা যায় শিক্ষক দিলীপ রবি দাস আসেননি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রধান দেবাশীষ দেব নাথ বলেন, উনি বিয়ের ছুটিতে আছেন। ১২টায় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে গেলে দেখা যায়,  বিভাগীয় প্রধান শুকলা রানী রায় এবং মো. হাবিবুর রহমান খান এখনও আসেননি। তবে একজন শিক্ষক বলেন, মো. হাবিবুর রহমান খান ছুটিতে আছেন। ১২.১০ মিনিটে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে গেলে বিভাগীয় প্রধান ইমাম উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, উনি ছুটিতে আছেন।

এদিকে, শনিবার ১০.২০ মিনিটে সরকারি মহিলা কলেজে গেলে দেখা যায়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ফাতেমা ইয়াছমিন ও মো. মহসিন মিয়া এখনও আসেননি। কলেজের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ফাতেমা ইয়াসমিন মাসে ২/৩ দিন আসেন। ১০.৩২ মিনিটে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে গেলে দেখা যায় বিভাগীয় প্রধান মো. রবিউল আউয়াল ও রেজাউল করিম জনি এখনও আসেননি। অফিস সহকারী জানান, শিক্ষক রেজাউল করিম জনি ঢাকা থেকে আসতেছেন। ওই বিভাগের অতিথি শিক্ষক আশিকুর রহমান আছেন। ১১টায় কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল মুজিব এর কক্ষে গেলে দেখা যায় তালা ঝুলছে। কোথায় আছেন জানতে চাইলে একজন অফিস স্টাফ  বলেন, ‘স্যার সিলেট থেকে আসতেছেন। উনি সপ্তাহে কয়দিন আসেন এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে ২/৩ দিন আসেন। তবে উপাধ্যক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেন। ১১.০৫ মিনিটে ইতিহাস বিভাগে গেলে দেখা যায়, বিভাগীয় প্রধান রওশন আরা ও পলাশ চক্রবর্তী এখনও আসেননি। ১১.১৫ মিনিটে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে গেলে দেখা যায় বিভাগীয় প্রধান শাহ আব্দুল ওয়াদুদ উপস্থিত রয়েছেন কিন্তু প্রভাষক উৎপল সাহা ও মো. আব্দুল আওয়াল এখন আসেননি। তবে বিভাগীয় প্রধান জানান, এখনও তাদের ক্লাসের কিছু সময় বাকি আছে।

মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান বলেন, অনেকের ক্লাস দেরিতে থাকায় দেরি করে আসেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপনার কথাও সত্য, কয়েকজন আছেন মাঝে মধ্যে আসেন। তাদেরকে বেশি চাপ দিলে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান।                   

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফজলুল আলী বলেন, ‘অনেকেই ওই দিন একটু পরে এসেছেন। আবার কয়েকজন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে আছেন। 
ক্লাস না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন বলেন, এ নিয়ে আমি গত কয়েকদিন যাবত আলোচনা করছি। ফলাফল খারাপ হওয়ার জন্য অনেকটা শিক্ষকরাই দায়ী। 

কেএসটি

আরও পড়ুন