• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৯:১৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৬:৫৫ পিএম

বিয়ের আসরে বাবাকে খুন

অবশেষে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে

অবশেষে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে

বিয়ের আসরেই মেয়ের বাবাকে কুপিয়ে হত্যা। ছুরিকাঘাতে মা গুরুতর আহত। এর মাঝেও স্বজনদের অনুরোধে স্বপ্না আক্তার ফাতেমার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বাবার লাশ রেখেই তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার প্রিয়াংকা শুটিং সেন্টারে এই মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে। ঘাতক যুবক সজীব আহমেদ রকিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বপ্নার মায়ের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। 

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে দিলু রোডে একই বাসায় ভাড়া থাকত দুই পরিবার। সেই সময় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে স্বপ্না আক্তার ফাতেমা (১৮) ও সজীব আহমেদ রকির (২৩)। তবে রকির মাদক সেবন ও বখাটে আচরণের কারণে ৩ বছর আগে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর থেকেই সে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল স্বপ্নাকে। পরে স্বপ্নার পরিবারের কাছে অনেকবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেও তারা কেউ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এর পর থেকে রকি নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। 

রকির ভয়ে স্বপ্নার পরিবারের সদস্যরা একসময় গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল চলে যান। সেখানে দেড় বছর থাকার পর আবার তারা ঢাকায়  ফেরেন। বছর খানেক আগে স্বপ্নার সঙ্গে তার খালাতো ভাইয়ের বিয়ে হয়। তবে রকির কারণে সেখানেও সংসার করতে পারেননি স্বপ্না। প্রায় ৬ মাস আগে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। রকির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন স্বপ্নার বাবা তুলা মিয়া। এই ঘটনায় রকি একমাস জেলও খেটেছে। 
 
সর্বশেষ চট্টগ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় স্বপ্নার। বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে বাসা ও কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রকি ও তার কয়েকজন সহযোগীকে দেখে হামলার আশঙ্কা করেছিলেন তুলা মিয়া। ওইদিন সকালেই তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। 

দিলু রোডে প্রিয়াংকা শুটিং সেন্টারে ঘরোয়াভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল দুপুর ১টায়। ওই কমিউিনিটি সেন্টারের একটি কক্ষে দুই পরিবারের সাত-আটজন সদস্যের উপস্থিতিতে বিয়ের আয়োজন করা হয়।

খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ফরিদ হোসেন বলেন, কমিউনিটি সেন্টারের পেছনের দেয়াল টপকে এসে রকি চিৎকার করে বলছিল, ‘আমার স্বপ্না কই’। তখন মেয়ের বাবা গিয়ে রকিকে সেখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তাকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে স্বপ্নার মা ফিরোজা খাতুনকেও সে ছুরিকাঘাত করে। তুলা মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

বিকাল ৪টায় স্বপ্না আক্তার ফাতেমার বিয়ে হয় চট্টগ্রামের ওই যুবকের সঙ্গে। এই বিয়েতে উকিল হয়েছেন দিলু রোডের বাসিন্দা মো. আলম। তিনি বলেন, এতসব কিছুর পরেও ভাবলাম বিয়েটা হওয়া উচিত। বিয়ে দিয়ে তাকে আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। সাড়ে ৫টার ট্রেনে তারা চট্টগ্রাম চলে গেছে। 

বাংলামোটর এলাকার পলাশ মোটর পার্টসের কর্মচারী জুয়েল জানান, মোটর পার্টস দোকানে চাকরি করতো রকি। সে স্থানীয় একাধিক স্কুলের সামনে বখাটে কিশোরদের নিয়ে আড্ডা দিত।

হাতিরঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ বলেন, তুলা মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে রকি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে রকি কারাগারে আটক রয়েছে।

এইচ এম/একেএস/ এফসি

আরও পড়ুন