বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী কৃষিঅধ্যুষিত উপজেলা নবাবগঞ্জের গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কগুলো বেহাল দশায় রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা ও পানি জমে পরিবহন চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। এমনকি পথচারীদের জন্য হাঁটাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এ অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতিকে দায়ী করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নবাবগঞ্জ-পাড়াগ্রাম সড়কের যন্ত্রাইল থেকে চন্দ্রখোলা পর্যন্ত রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে সড়ক সংস্কারের নামে প্রতিনিয়ত চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুড়ি। এছাড়া রাস্তা উন্নয়নের নির্মাণ সামগ্রী ইট, পিচ, পাথর ও গাড়ি রাখার কারণে প্রসস্ত সড়কটি সরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে ফলে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে এক ধরনের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে এখানকার যাত্রী ও পথচারীদের কাছে যানজোট ও দুর্ঘটনা যেন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন অংশে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রাত দিন ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও দেশীয় তৈরী নছিমন, করিমন পরিবহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জ পাড়াগ্রাম আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডলি কনস্টাকসন লিঃ ও মেসার্স জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল লিঃ। নবাবগঞ্জ থেকে সিংজোর ১০ কিলোমিটার কাজ করবে ডলি কনস্টাকসন লিঃ। যার সংস্কার ব্যায় ৭ কোটি ৬২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। অপদিকে সিংজোর থেকে পাড়াগ্রাম বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার কাজ করবে জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল লিঃ। যার উন্নয় ব্যায় ৬ কোটি ৪৬ টাকা ৫১ পয়সা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মেসার্স ডলি কনস্টাকসন লিঃ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নবাবগঞ্জ থেকে সিংজোর পর্যন্ত সড়টির উন্নয়ন কাজে গাফিলতি ও ধীরগতিতে কাজ করায় এই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি যেন আর পিছু ছাড়ছে না।
জনগণের ভোগান্তি ও নবাবগঞ্জ-পাড়াগ্রাম সড়কের উন্নয়ন কাজের বিষয় উপজেলার শোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমান তুহিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন কতিপয় সড়ক ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে কৃষিভিত্তিক শোল্লা, যন্ত্রাইল ও কৈলাইলবাসীর ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। তিনি নবাবগঞ্জ-পাড়াগ্রাম সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।
নবাবগঞ্জ পাড়াগ্রাম সড়কের জনভোগান্তি সম্পর্কে উপজেলা কৃষকলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলমান বর্ষা মৌসুমে পাড়াগ্রাম আঞ্চলিক সড়কে উন্নয়নের নামে জনভোগান্তি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। সড়টির উন্নয়ন কাজে সমন্বয় না থাকায় পথচারিদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। প্রতিনিয়ত সড়কটিতে চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুড়ি। সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি জমে আছে। এতে পথচারীসহ বিভিন্ন গণপরিবহন চলাচলে বিরাম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের নিজ গন্তবে সময় মতো পৌঁছাতে পারছে না।
উপজেলার অটোরিকশা ও ইজিবাইক শ্রমিক নেতা মো. তাজুল বলেন, আমাদের এই সড়কটি অনেক দিন যাবত সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরী হয়েছে। এতে যান চলাচলে প্রতিদিন বিঘ্ন ঘটছে। কাজ কেন ফেলে রেখেছে ঠিকাদার আমরা বুঝি না।
পাড়াগ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল গাজী বলেন, কিছু স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। যাতায়াতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কার কাছে বলবো এই সমস্যার কথা।
ধীরগতিতে সড়ক উন্নয়ন বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডলি কনস্টাকসন লিঃ এর মালিক মো. নাসির উদ্দিনকে মুঠোফোনে সড়ক সংস্কারের ধীরগতির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন। বার বার চেষ্টা করলেও পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।
সড়টির উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার দপ্তরের প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আমরা দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে চাপ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি অচিরেই সড়কটির উন্নয় কাজ শেষ হবে।
একেএস