• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৯:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৯:৪৮ এএম

সেতু আছে, নেই সংযোগ সড়ক

সেতু আছে, নেই সংযোগ সড়ক

সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি। ফলে ক্ষোভ জানিয়েছেন দোখলা বাজার ও বেলতলী গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বলেন- সরকার এ গ্রামের জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সেতু নির্মাণ করলেও সেতুটি কোনো কাজে আসছে না এই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের। বাসিন্দারা স্থানীয়রা জনপ্রতিনিধি (চোয়ারম্যান, মেম্বার) ও গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদের কাছে সড়ক নির্মাণের দাবি জানান।       

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের দক্ষিণ বেলতলী গ্রাম ও শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা (দোখলা বাজার) বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লবলং খাল। ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার খিরু নদীর সংযোগস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীতে গিয়ে মিলেছে। দক্ষিণ বেলতলী গ্রামের মানুষ লবলং খাল পার হতো বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের সুবিধার জন্য ২০১৬-২০১৭অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে বেলতলী রাজ্জাক বেপারীর বাড়ির উত্তর পার্শ্বে চকলেট ফ্যাক্টরির নিকট প্রায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করা হয়।

মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, সেতু নির্মাণের আগে স্থানীয় বাসিন্দারা খালের উপর বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে এ খাল পার হতো। সাঁকো থেকে নেমে ৫/৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ধান খেতের আইলকে চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতো বেলতলী গ্রামের মানুষ। ওই গ্রামের মানুষের চলাচলের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ওই খালের উপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে খালের পাশের জমির মালিকেরা জমির আইল কেটে সরু করে ফেলে। লবলং খালের পানির স্রোতে ও অতি বৃষ্টির কারণে সরু আইলের কোথাও কোথাও কোমর সমান গর্ত হয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বাঁশ সংগ্রহ করে ওইসব গর্তে বাঁশ দিয়ে চলাচল স্বাভাবিক করে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত খেতের আইল মাটি দিয়ে প্রশস্ত না করায় জমির সাথে আইল মিশে গিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভাড়ি বৃষ্টিপাত হলে বুক সমান পানি জমে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত চার-পাঁচ বছর যাবত চলছে এ অবস্থা। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, জমিতে পানি না থাকলে এ গ্রামের লোকজন খেতের মাঝখানের আইল ব্যবহার করতো। এতে গ্রামের ছোট ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা-নেয়া করার জন্য জমির মাঝখানের আইল দিয়ে চলাচল করতো। জমির সাথে আইল মিশে যাওয়ায় তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে গ্রামে আসতে হচ্ছে। এতে সময় ব্যয় হচ্ছে এবং ব্যবসায়িকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ গ্রামের লোকজন। তাছাড়া আশপাশের বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা থেকে ওই খালে ক্যামিক্যাল মিশ্রিত পানি ও বর্জ্য অপসারণ করায় পানি দূর্ষিত হয়ে পড়েছে। এতে চলাচলকারী লোকজনের চর্মসহ বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

স্থানীয় বাড়ির মালিক নাজমুল আলম জানান, এ এলাকা শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত হওয়ায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ২০/৩০টি ঘর তৈরি করেছিলাম। ওই ভাড়া থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতাম। কিন্তু সেতু পা হয়ে সড়ক না থাকায় অনেক পথ ঘুরে গ্রামে আসতে হয়। তাই কেউ এখানে ঘর ভাড়া নিতে চায় না। এতে কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ গ্রামের বাড়ির মালিকদের।

কারখানার শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, আগে ওই গ্রামে ভাড়া থাকতাম। গত দুই মাস আগে বাসা ছেড়ে দিয়ে সেতুর এ পাশে নতুন বাসায় উঠেছেন। তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণের সাথে সাথে খেতের মাঝখানে মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণ করা হলে সড়ক নির্মাণ করা হলে গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলে সুবিধা হতো। 

গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কেয়া খাতুন জানান, পরিকল্পনা ছাড়া সেতু নির্মাণ করার ফলে সেতুটি কোন কাজে আসছে না। 

মাওনা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) নুরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে একাধিকবার জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলেছি। জনদুর্ভোগ লাঘবে খুব দ্রুত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

কেএসটি

আরও পড়ুন