• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৮, ২০১৯, ১২:১০ পিএম

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস

মিয়ানমারের সামরিক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের মুখে সেদেশ থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ ও দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে পাওয়া তথ্য মতে জানা যায়, বুধবার (৭ আগস্ট) দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠকে যোগদেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

বৈঠকে আঞ্চলিক ও দি-পাক্ষীক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন দুই মন্ত্রী। আলোচনার এক পর্যায়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী শরনার্থী শিবিরে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদানের এই আশ্বাস দেন অমিত শাহ। বৈঠকে বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বৈঠকের শুরুতে ভারতের সদ্য প্রয়াত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন আসাদুজ্জামান খান। এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় আসাদুজ্জামান খানকে অভিনন্দন জানান অমিত শাহ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের মানবিক সহযোগিতা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অপরদিকে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে ভারত সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মন্ত্রী অমিত শাহ। রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ইস্যুতে শাহ বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদে ও দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ভারত সহযোগিতা করবে।

বৈঠকে উভয় মন্ত্রী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি এ সম্পর্ক আরও বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

দু'ই মন্ত্রীই মনে করেন, দু’দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য, ধর্ম নিরপেক্ষতা, উন্নয়ন সহযোগিতা ও অন্যান্য সব বিষয়ে গভীর মিল রয়েছে। দুই দেশের নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে দু’দেশ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে মন্ত্রীরা সভায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এসময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশের সীমানা-ভূমি ব্যবহার করে কোনো সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী যাতে ভারতসহ অন্য কোনো দেশের ক্ষতি সাধন করতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সভায় মাদকপাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বাংলাদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান।

বৈঠকে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দলের অন্যান্যরা হলেন, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব শহিদুজ্জামান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সোহাইল হোসেন খান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহম্মেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুবকর সিদ্দীক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক নীলিমা আক্তার, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম-সচিব ড. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক তারেক প্রমুখ।

ভারতের পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন- স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী জি কিষাণ রেড্ডি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিত্যানন্দ রাই, ইউনিয়ন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজিব গৌভা ও সচিব (সীমান্ত ব্যবস্থাপনা) বি আর শর্মা প্রমুখ।

এসকে