• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০১৯, ০৯:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৯, ২০১৯, ০৯:৩৫ এএম

ঈদে ঘুরে আসুন লালদিয়া বন-সমুদ্র সৈকতে

ঈদে ঘুরে আসুন লালদিয়া বন-সমুদ্র সৈকতে

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে লালদিয়া বন। সুন্দরবনের হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বন পার হয়ে গেলেই চোখে পরে এই লালদিয়া। এ বনের পূর্বে বিশখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে। এ বনের পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোন অংশে কমতি নেই। এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত। এখানে সাগরের নোনা জল এসে আছড়ে পরছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাকড়ার দল ছুটে বেড়ায় বেলাভুমিতে। সে এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভূতি যা আপনাকে আবারও কাছে টানবে বার বার।

যেভাবে যেতে হবে  
ঢাকা হতে সড়ক ও নৌ উভয় পথেই পাথরঘাটা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন সকাল এবং রাতে উভয় সময় ছেড়ে যায়। সাকুরা, বনফুল, সুরভী, বরিশার এক্সপ্রেস সহ বেশ কয়েকটি পরিবহন ঢাকা-পাথরঘাটা রুটে চলাচল করে। আপনি চাইলে নদী পথেও যেতে পারেন। প্রতিদিন কয়েকটি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দর থেকে পাথরঘাটার কাকচিড়া লঞ্চঘাট হয়ে বরগুনা যায়। আপনি কাকচিড়া নেমে মাহেন্দ্র যোগে পাথরঘাটায় অসতে পারেন। লঞ্চই আরামদায়ক বাহন।

পাথরঘাটা থেকে ট্রলার কিংবা নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায় লালদিয়া বনে। অথবা সুন্দরবনের হরিণঘাটা দিয়ে হেটেও যাওয়া যায় লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকতে। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে।

কোথায় থাকবেন 
পাথরঘাটায় বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। ডাকবাংলো রয়েছে, এ ছারাও থাকতে পারেন বরগুনা শহরে। বরগুনায় রাত্রিযাপন ব্যবস্থা খুবই ভাল। অনেকগুলি রেস্ট হাউস আছে এছাড়া আছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।
রেস্ট হাউস জেলা পরিষদ ডাকবাংলো (০৪৪৮-৬২৪১০)
খামারবাড়ী রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৪৬৯)
পানি উন্নয়ন বোর্ডেও রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৫১)
এগ্রো সার্ভিস সেন্টার (০৪৪৮-৬২৭২৮)
গণপূর্ত বিভাগ (০৪৪৮-৬২৫০৫)
রেস্ট হাউস এল.জি.ই.ডি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৪২)
সিইআরপি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৫১)।
হোটেল তাজবিন (০৪৪৮-৬২৫০৩)
বরগুনা রেস্ট হাউস (০১৭১৮৫৮৮৮৫৬)
হোটেল বসুন্ধরা (০৭১২৬৪৫৩০০৭)।

তবে লালদিয়া থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার। সুতরাং ইচ্ছে করলে কুয়াকাটাও থাকতে পারেন। কুয়াকাটা থাকাই সবচেয়ে উত্তম। তাতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটাও দেখা হয়ে যাবে।

নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান 

টেংরাগিরি বন

বঙ্গোপসাগরের নোনা পানির ঢেউ সাদা ফেনা তুলে আছড়ে পড়ছে তীরে। সকালের সূর্যরস্মি ঢেউয়ের ফেনায় পড়ে ঝকমক করছে। পাখির দল উড়ে যাচ্ছে এদিক সেদিক। বড় বড় ট্রলার নিয়ে জেলেরা ছুটছে গভীর সাগরের বুকে। এমন মন ভোলানো অনেক দৃশ্য চোখে পড়বে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা সোনাকাটা বনে। নবগঠিত সোনাকাটা ইউনিয়নের অন্তরগত এ দ্বীপটি ‘সোনাকাটা বন’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। বনের পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন আর হরিণবাড়িয়া, উত্তরে বিশাল রাখাইন পল্লী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এ বন থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটিই উপভোগ করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া এ বনে আছে নানা প্রজাতির গাছপালা। আছে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির বিচরণ। ফাতরার বনে ইকোপার্ক তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট একটি ডাকবাংলো। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ট্রলারে সোনাকাটা যেতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে।

সোনাকাটা বনের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট খাল। ট্রলার নিয়ে এই খালে ভ্রমণ আর চরের নানা দৃশ্য উপভোগ করার মজাই আলাদা। সোনাকাটার আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি ভ্রমণ স্পট রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গইয়ামতলা ও আশারচর উল্লেখযোগ্য। সমুদ্র ভ্রমণ, গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর অবারিত সুযোগ রয়েছে সেখানে। অসংখ্য বানর, শূকর, বনমোরগ, মদনটাক, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ, লাল কাঁকড়া, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি আর সাপের অবাধ বিচরণ রয়েছে সোনাকাটা বনে। সেখানে ছোট-বড় ১২টি কিল্লা ও সাতটি মিঠা পানির পুকুর রয়েছে।

সোনাকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অভ্যান্তরে পর্যটকদের চলাচলের জন্য দুই কিলোমিটারের বেশি সিসি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হরিণ ও বাঘের বেষ্টনী এবং কুমির প্রজনন কেন্দ্রসহ বন্য প্রানীর আশ্রায়স্থল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বন কৃর্তিপক্ষ।

আশার চর
সোনাকাটার পাশেই আশার চরের অবস্থান। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও সেখানে যান। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লি রয়েছে আশার চরে। দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা।

তালতলী রাখাইন পল্লী
আশার চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লি। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লিতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত প্রর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে।

কেএসটি

আরও পড়ুন