• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০১:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০১:৩৩ পিএম

রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে শারীরিক প্রতিবন্ধী

রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে শারীরিক প্রতিবন্ধী

সিরাজগঞ্জ জেলার ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের রক্ষিত ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বা ট্রেনে কাটা পড়ে বারবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। 
এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সতর্ক হচ্ছেন না ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথে ট্রেনে মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালে থাকা রেল বিভাগের কর্মচারীরা। 

গত ১৫ জুলাই ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের উল্লাপাড়ার সলপ স্টেশনের অদূরে রেলক্রসিংয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনের ইঞ্জিনের ধাক্কায় বর-কনেসহ মাইক্রোবাসের ১ যাত্রী নিহত হন। এর আগে ঝাঐল ওভারব্রিজের কাছে শাহবাজপুরে গরুবোঝাই নসিমন ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ৪ গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। এছাড়া মুলিবাড়ীতে অনেক পথচারী ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলেও সতর্ক হচ্ছেন না রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালে থাকা রেল বিভাগের কর্মচারীরা।

এলাকা ঘুরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বরত ৩ জন সিগন্যালম্যান প্রায়ই কর্মস্থলে থাকেন না। শারীরিক প্রতিবন্ধী মুলিবাড়ী গ্রামের আবদুল কাদেরকে মুলিবাড়ী সিগন্যালের দায়িত্বে রেখে প্রায়ই ডিউটি ফাঁকি দিচ্ছেন দায়িত্বরতরা। মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালে রেল বিভাগের স্থায়ী ৩ জন কর্মচারী রয়েছেন। তারা হলেন- হিরামন দাস, মোজাম্মেল হক ও আশরাফ উদ্দিন। নানা অজুহাতে প্রায়ই তারা ডিউটি ফাঁকি দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল কাদেরকে রেখে যান। 

গত ১৪ আগস্ট সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে বনলতা ট্রেন ঢাকার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার আগে মুলিবাড়ী রেলক্রসিং দিয়ে যাচ্ছে। ট্রেনটি আসার আগে শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল কাদের হাতে সবুজ পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এর আগে তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়ে সিগন্যালের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দুটি ব্যারিয়ার নামান। এরপর তিনি সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনটি পার করিয়ে দেন। 

এ বিষয়ে আবদুল কাদের বলেন, ‘হিরামন দাস অসুস্থ হওয়ায় তার পরিবর্তে আগের মতোই দায়িত্ব পালন করছি। আজ শুধু নয়, কেউ না থাকলে তার পরিবর্তে আমিই দায়িত্ব পালন করি। বিনিময়ে তারা প্রতিদিন আমাকে এক থেকে দেড়শ টাকা দেয়।’ 

স্থানীয় কয়েকজন চা ও মুদি দোকানি বলেন, শুধু হিরামন দাস নন, এখানকার সবাই ফাঁকি দেন। আবদুল কাদের না থাকলে কী যে হতো। তারা আরও জানান, ১০০-১৫০ টাকা বকশিশ দিলেই দিন-রাতে যেকোনো সময় আবদুল কাদের দায়িত্ব পালন করেন।

এ ব্যাপারে মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালের দায়িত্বে থাকা হিরামন দাস বলেন, আমি হার্টের রোগী। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হলে তখন কাদেরকে দায়িত্ব দিই। আর মাত্র চার বছর চাকরি আছে। তবে শুধু আমি একা নই, অন্য সহকর্মীরাও কাদেরের ওপর নির্ভর করেন। 

সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন মজুমদার বলেন, মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটছে। পথচারী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকজন সেখানে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছেন। এ জন্য দায়িত্বরত সিগন্যালম্যানদের আরও বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন। আর তা না করে যদি তারা কর্মে ফাঁকি দেন, তাহলে বিষয়টি একবারেই অনৈতিক। বিষয়টি রেল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন। 

তবে এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ, পাকশীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালে থাকা কর্মচারীদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

কেএসটি

আরও পড়ুন