• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০১:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০১:৫৪ পিএম

সিন্ডিকেটে দিশেহারা চামড়া ব্যবসায়ীরা

সিন্ডিকেটে দিশেহারা চামড়া ব্যবসায়ীরা

নাটোরে কোরবানির পশুর চামড়া পিস হিসেবে ক্রয় করে আর বিক্রি করছে বর্গফুট হিসেবে। এমন অভিযোগ উঠেছে আড়তদার ও  ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকায় খাসির চামড়া পিস এবং ২শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত গরুর চামড়া পিস বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে দিশেহারা বিভিন্ন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে চামড়া এখানে কেনা হলেও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের দাবি ট্যানারি মালিকদের বেধে দেয়া দামেই কেনা হচ্ছে চামড়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথে চামড়ার আড়ৎগুলোতে আসছে কোরবানির চামড়া। অন্য জেলার চামড়ার ব্যবসায়ীরা সরকারিভাবে নির্ধারিত দামে চামড়া কেনে নাটোরে আনেন। তবে এখানকার আড়তদারদের দামের কারণে বিপাকে পড়েছেন অন্য জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। নাটোরের আড়ৎগুলোতে খাসির চামড়া ১০ টাকা পিস এবং গরুর চামড়া ৩শ খেকে ৫শ টাকায় কেনায় লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়ার দাম না পেয়ে বাইরের জেলার অনেক ব্যবসায়ী এখানে চামড়া লবণজাত করে ফিরে যাচ্ছেন। আবার লবণজাত করতে গিয়ে শ্রমিক সংকটে পড়ছেন বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা। নাটোরের প্রায় দেড়শ আড়ৎ থেকে গত বছর কোরবানির পর দেশের ৩২টি জেলার প্রায় ১১ লাখ পিস চামড়া বিক্রি হয়।

নাটোর সদর উপজেলার ভাটোদাঁড়া গ্রামের কোরবানিদাতা মোজাহারুল ইসলাম জানান, তিনি ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় কোরবানির জন্য গরু কিনেছিলেন। কোরবানির পর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৭শ টাকায়।

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার স্কুল শিক্ষক ওহিদুর রহমান জানান, তিনি ৮৫ হাজার টাকায় গরু কিনে চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৫শ টাকায়। গতবার এ ধরনের এক পিস চামড়া বিক্রয় করেছি ১৫শ-১৮শ টাকায়।  

দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মজিবর রহমান খলিফা জানান, তিনি সাড়ে দশ হাজার টাকায় একটি খাসি কিনে কোরবানি দিয়েছেন। চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৩০ টাকায়। যা সরকারের বেধে দেয়া বর্তমান বাজার অনুযায়ী বর্গফুট হিসেবে এর দাম হওয়ার কথা দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। 

অনেকেই চামড়া বিক্রয় করে সেই টাকা মাদ্রাসা অথবা গরিব মিসকিনদের দান করে। কিন্তু এবার কোরবানিদাতারা চামড়ার সঠিক দাম পাননি। 

নাটোর দিঘাপতিয়া ফজলুল উলুম বহুমুখী ক্বাওমি মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান জানান, গত বছর মাদ্রসায় ৪৫টি গরুর চামড়া ও ৬৫টি খাসির চামড়া কোরবানিদাতারা দান করেছিলেন। তবে এবারে গরুর চামড়া ১২৫টি এবং খাসির চামড়া ২ শতাধিক দান করেছেন স্থানীয় কোরবানিদাতারা। 

নাটোরের বাগাতিপাড়া এলাকায় মৌসমী চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল আলী জানান, ট্যানারি মালিকরা বিদেশে কম দাম চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাশাপাশি ট্যানারি স্থানান্তরে অনেক অর্থ ব্যয় হওয়ায় অনেকে চামড়া কিনছেন না। ফলে তাদেরকেও কম দামে চামড়া কিনতে ও বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজশাহী সদর উপজেলার আমিনুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন নাটোর আড়তে তিনি ১৩০ পিস খাসির চামড়া কিনেছিলেন ৫০ টাকা পিস হিসেবে। পরে বর্গফুট হিসেবে ওই চামড়ার মূল্য হিসেবে তিনি গড়ে ৮০ টাকা করে পেয়েছেন। অপরদিকে তিনি ৫১ পিস গরুর চামড়া কিনেছিলেন ৫শ থেকে ৭শ টাকা পিস হিসেবে। পরে ট্যানারি মালিকদের কাছে তিনি ওই চামড়া বর্গফুট হিসেবে বিক্রি করে গড়ে ৭৫০ টাকা হিসেবে দাম পেয়েছেন।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, ফরিয়া বা ব্যবসায়ী যে যেভাবেই চামড়া কিনে আনুক না কেন, আড়ত ও ট্যানারি মালিকরা বর্গফুট হিসেবেই চামড়া কেনেন। বর্তমানে খাসির চামড়া ১৫-১৮ টাকা এবং গরুর চামড়া ৪৫-৪৮ টাকা বর্গফূট হিসেবে কেনা-বেচা চলছে। 

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, দেশের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মার্কেট থেকে মোট চামড়ার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ নাটোর বাজার থেকে সরবরাহ করা হয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেশি দামে চামড়া কিনছেন। পরে তারা নাটোর বাজারে বিক্রি করতে এসে লোকসানে পড়ছেন। তবে ট্যানারি মালিকদের টাকা না পাওয়ায় চামড়া কিনতে সমস্যা হচ্ছে। 
চামড়ার এই অস্বাভাবিক কম দামের কারণে পথে বসেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চামড়ার টাকা সহায়তা পাওয়া দরিদ্র মানুষ ও প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সংশ্লিষ্ট সকলের।

কেএসটি
 

আরও পড়ুন