• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০১৯, ০৯:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২১, ২০১৯, ০৯:৪০ পিএম

৬১ এনজিওর আপত্তি

দুদেশের প্রস্তুতির মাঝেও রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা

দুদেশের প্রস্তুতির মাঝেও রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা

দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণ উদ্যোগ বানচাল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফেরত কার্যক্রমের শেষ মুহূর্তে এসে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি ৬১টি এনজিওর যৌথ বিবৃতিতে তালগোল পাকানোর অবস্থা হয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। তবে প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা পূর্বনির্ধারিত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবারকে লক্ষ্য করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। 

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিনের যেকোনো সময় রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে। যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও গ্রহণ করতে মিয়ানমারের প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর খবরে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। 

কিন্তু রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ও কতিপয় এনজিও এ নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্পনের ব্যাপারে যখন দুই দেশসহ সংশ্লিষ্টরা মোটামুটি প্রস্তুত তখনই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের কথিত অবনতির ধুয়ো তুলে বিবৃতি দিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন,অ্যাকশন এইডসহ ৬১টি এনজিও। তারা নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় শরণার্থীদের জড়িত করার আহ্বান জানিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর খবরে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারে এখন যে অবস্থা তা নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় না। এর প্রেক্ষিতে ওই ৬১টি এনজিও চারটি সুপারিশ উত্থাপন করেছে। 

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশি এনজিওগুলোতে ১২ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৮৫/৯০ হাজার টাকা বেতনের নিয়মিত চাকরিরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫/৬ হাজারের মতো। সহজেই এদের দিয়ে ওরা মিয়ানমার ফেরত না যেতে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে উস্কানি ও প্ররোচিত করার নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এসব চাকরিরত রোহিঙ্গাদের মাসিক বেতনের একটি নির্ধারিত অংশ তাদের কতিপয় সন্ত্রাসী সংগঠনকে দিতে হয় বলে জানান উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। 

নয়াপাড়া-২৬ নং ক্যাম্পের যাচাইকৃত তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা আবু ছিদ্দিক (৭৫), রশিদ আহমদ (৭০) শেষ বয়সে যেন নিজেদের পূর্ব পুরুষের ভিটে-মাটিতে ফিরে যেতে পারে সেই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। তাদের মাঝে নিজ মাতৃভূমি রাখাইনের জন্য মন জ্বলছে। কারণ সেখানে তাদের পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি, বসতভিটা, জীবন-জীবিকা, বেড়ে ওঠা সব কিছু। বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরের মতো পরিবেশ তাদের কাছে অচেনা।

বুধবার (২১ আগস্ট) রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানোর নির্ধারিত টেকনাফের নাফনদী সংলগ্ন জ্বলপথের কেরুনতলী ঘাট ও উখিয়া সংলগ্ন ঘুমধুম স্থলপথ সীমান্ত ঘাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে দেখা গেছে। কেরুনতলীতে উদ্বাস্তু প্রত্যার্পণের ট্রানজিট ক্যাম্পের ১১টি টিন শেড ব্যারাক ঘর রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে ৩টি করে ৩৩টি ঘর নির্মাণ করা আছে। এদিকে উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের বিপরীতে ঘুমধুমে নির্মিত অপর ট্রানজিট ক্যাম্পও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে ১৮টি সেমিপাকা ব্যারাক শেডে ৫৭টি ঘর নির্মাণ রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবকাঠামোও প্রস্তুত। তবে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ রাখাইনে ফেরত গমনেচ্ছু কোনো রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়নি। বৃহস্পতিবারের প্রত্যাবাসন নিয়েও স্পষ্ট কেউ কিছু বলছেন না।

কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম এনডিসি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়ে জানান, ‘প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা আশাবাদী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন হবে। গত দুদিন ধরে সরকারি কর্মকর্তা, ইউএনএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্টরা তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত ২৩৫টি রোহিঙ্গা পরিবারের মতামত নেয়া হয়েছে। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কোনো প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে।

এফসি

আরও পড়ুন