যশোরে দিন দিন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তরোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ৭ শ ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলেছে । বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯১ জন। এর মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৮৯ জন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭১ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩১ জন। বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। তবে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত যশোরে নতুন করে ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচার-প্রচারণা, আলোচনা সভাসহ নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ৩টি মনিটরিং টিম গঠন, ১টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। তার পরেও কোনভাবেই কমছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঢাকায় না গিয়েও নিজ এলাকা থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ। ডেঙ্গু জ্বরে প্রকোপ না কমায় স্বাস্থ্য বিভাগও চিন্তিত । জোরদার করা হয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা কার্যক্রম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ২০ জন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও ১৪ জন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে রোববার সকাল ৮ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় যশোরে ৮৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রাডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিলো।

এদিকে, ডেঙ্গু পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৮৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো। চিকিৎসা গ্রহণে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে এদিন বাড়ি ফিরেছেন ৩১ জন।

যশোর ২৫০ শয্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, প্রতিদিন একাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় রোগীর চাপ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। তিনি আরো জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বিষয়ে বরাবরই সোচ্চার ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন।

গতকাল বুধবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আরো ৫শ কিট এনএস-১ দিয়েছেন পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু।

এর আগে শনিবার ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা নিরীক্ষার উপকরণ ক্রয় ও চিকিৎসায় ব্যয়ের জন্য ২ লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন সদর (৩) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। ইতিমধ্যে ২ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোববার ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে আসেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। তিনিও ১ হাজার পিস কিট এনএস-১ দেন। এরআগেও তিনি ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণ প্রদান করেছিলেন।

এছাড়াও যশোর জেলা বিএনপি, যশোর পৌরসভা, বিএমএ, ডেন্টাল সার্জনস ফোরাম ও রোগী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। সরকারি বেসরকারি সহায়তায় ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ডেঙ্গু উপকরণের কোনো সংকট নেই।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, যশোরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ না কমায় তারাও চিন্তিত। শহরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী কমলেও বেড়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। গ্রামের মানুষ বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত  হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়েও তারাও চিন্তিত। ডেঙ্গুর প্রকোপ রুখতে হাসপাতালে আসা মানুষকেও সচেতন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এমএইউ