• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০১৯, ০৬:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৪, ২০১৯, ০৬:২৯ পিএম

লক্ষ্মীপুরে জিনের মসজিদ!

লক্ষ্মীপুরে জিনের মসজিদ!
লক্ষ্মীপুরের প্রাচীন নিদর্শন জিনের মসজিদ নামে পরিচিত মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ  -  ছবি : জাগরণ

প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। তখন মেঘনা ও খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর মোহনা জনবিরল বিশাল চরাঞ্চল। সময়ে সময়ে এখানে আগমন ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহান কিছু ধর্মসাধকের। বলা হয়, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে এই এলাকাকে কেন্দ্র করে। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮০০-৯০০ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে দেনায়েতপুর গ্রামে অবস্থিত।

ওই সময় রায়পুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ। সময়টি ছিল বাংলা ১২৩৫ সন। ইংরেজি ১৮২৮ সাল। প্রচণ্ড ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেয়া আব্দুল্লাহ নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। দেওবন্দে দীর্ঘ ১৭ বছর অভিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন ও দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন।

ভারতে পড়ালেখা শেষে বাংলাদেশে ফেরার পথে তিনি কিছুদিন দিল্লিতে অবস্থান করেন। এ সময় দিল্লি শাহী জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী ও শৈল্পিক অবয়ব তাকে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশে ফিরে অনুরূপ একটি মসজিদ নির্মাণের স্বপ্ন ও ইচ্ছা তার অন্তরে দোলা দেয়। তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রবল আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তিকে লাগিয়ে নিজ এলাকায় এসে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদ নির্মাণে অগ্রসর হন।

দেখতে দেখতে তিনি দিল্লির শাহী জামে মসজিদের হুবহু নমুনার ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থ এবং মাটি থেকে ১০ ফুট উঁচুতে ৩টি গম্বুজবিশিষ্ট বিখ্যাত এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। অধিকাংশ এলাকাবাসীর মতে, ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ মসজিদটি।

মসজিদটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মসজিদের তলদেশে ২০ ফুট নিচে রয়েছে ৩ কামরাবিশিষ্ট গোপন ইবাদতখানা। নির্জন পরিবেশে সেখানে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মাওলানা আবদুল্লাহ। মসজিদটির ভিটির উচ্চতা ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের প্রস্থ ৮ ফুট। মসজিদের সম্মুখের জরাজীর্ণ মিনারটির উচ্চতা ২৫ ফুট।

কথিত আছে, মসজিদের নির্মাণকাজ মাওলানা আবদুল্লাহর কিছু জিন শিষ্য রাতের আঁধারে সম্পন্ন করত। তাই এই ঐতিহাসিক মসজিদটি জিনের মসজিদ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। এলাকাবাসী এখনো বলেন, মসজিদের তলদেশে স্থাপিত পুকুরগুলোতে জিনরা গোসল করত, তারা এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়সহ জিকির-আজকারসহ অন্যান্য ইবাদত করত। এমনকি গভীর রাতে জিকিরের আওয়াজ অনেক দূর পর্যন্ত ভেসে আসত।

ঐতিহাসিক এই মসজিদটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮০০-৯০০ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এই মসজিদটির নান্দনিক রূপায়ণ ও অদ্ভুত অবকাঠামো এবং শৈল্পিক অবয়বের দিক থেকে এটি লক্ষ্মীপুর জেলার একটি প্রাচীন নিদর্শন। এর নির্মাণকৌশল ও স্থাপত্যকলা দেখতে হাজার হাজার দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকের সমাগম ঘটে। মসজিদটি রায়পুরের কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

মসজিদটি এলাকায় ‘মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেবের মসজিদ’ বলেও পরিচিত। তবে মসজিদের সামনে সিঁড়ির কাছে লাগানো শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদের নাম ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’।

এনআই

আরও পড়ুন