নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়া জামালপুরের আলোচিত সেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরকে অবশেষে ওএসডি করা হয়েছে। আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কঠোর নির্দেশনা ছিল। সেই অনুযায়ী আজ অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে ডিসিকে ওএসডি করার আদেশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শাখা থেকে আহমেদ কবীরের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, আজই এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
সম্প্রতি জামালপুরের ডিসির সঙ্গে তার নারী সহকর্মীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি তার অফিসের বিশ্রাম নেয়ার কক্ষ এবং ওই নারীর নাম সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।
খন্দকার সোহেল আহমেদ নামের একটি আইডি থেকে ওই ভিডিও পোস্ট হওয়ার পর প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক তার অফিসের গোপনীয় কক্ষের বেডরুমে নারী কর্মচারীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছেন। এক পর্যায়ে ব্যাপক আলোকিত ওই কক্ষের ইলেকট্রিক লাইটের সুইচ অফ করছেন, ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরা - ২ থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নিজেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসক তার ঘনিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন কর্মকতাসহ এক সাংবাদিক নেতার সঙ্গে রাতভর মিটিং করেন। ভোর ৬টায় মিটিং শেষে উপস্থিতরা জেলা প্রশাসকের বাসভবন থেকে বেরিয়ে যান। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে জামালপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিং করে আহমেদ কবীর দাবি করেন, তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ফেক আইডি থেকে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ওই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে।
সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, আপনার খাসকামরার ব্যাকগ্রাউন্ড, বেডকভার, কাপড়চোপড় হুবহু আপনার, এটা কীভাবে সাজানো হয়? ভিডিওতে আপনার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জামালপুরে যোগদান করেন ২০১৭ সালের ২৭ মে। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি তার অফিসকক্ষের পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ধূমপান ও ব্যক্তিগত সরকারি গোপনীয় বৈঠকের জন্য কক্ষটি ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেয়ার জন্য একটি খাট বসানো হয়েছে। তাতে বিশ্রাম নেয়ার মতো বালিশ, চাদর সবকিছুই আছে। সম্প্রতি ওই কক্ষে একাধিক নারীর যাতায়াতকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল।
এমএএম/ এফসি