• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০১৯, ০২:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০১৯, ০২:৩৬ পিএম

জালিয়াতির অভিযোগে ১৮ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জালিয়াতির অভিযোগে ১৮ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে উত্তরপত্র জালিয়াতির অভিযোগে মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানায় ১৮ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আনোয়ারুল আজিম বাদী হয়ে সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকালে মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় অপর আসামি বরিশাল বোর্ডের রেকর্ড সাপ্লাইয়ার গোবিন্দ চন্দ্র পালকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানবন্দর থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, বোর্ডের কর্মচারী গোবিন্দসহ অভিযুক্ত ১৮ পরীক্ষার্থীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার সাথে বোর্ডের আরো অনেকে জড়িত রয়েছে। যে কারণে আসামির সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই প্রমাণ স্বরূপ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল কাগজপত্র বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসি।

এদিকে, জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। সর্বশেষ মামলা দায়েরের পূর্বে সোমবার (২৬ আগস্ট) রেকর্ড শাখায় কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে তদন্ত কমিটি।

এর আগে গত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার উচ্চতর গণিতের প্রধান পরীক্ষক পিরোজপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, নিরীক্ষক নলছিটি ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আবু সুফিয়ান এবং পরীক্ষক মানিক মিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষক মনি মোহনের সাথে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

এ সময় পরীক্ষক মনি মোহনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সদস্যরা মনি মোহনের কাছে জানতে চান ‘পরীক্ষকের খাতায় নাম না থাকার পরেও আপনি কিভাবে খাতা পেলেন। শুধু তাই নয় সবাই খাতা পেয়েছে ২০০ আর আপনি (মনি মোহন) কিভাবে ২৬৯টি খাতা পেলেন’। কিন্তু কোন প্রশ্নেরই সঠিকভাবে জবাব দিতে পারেননি মনি মোহন। এক পর্যায়ে তদন্ত কমিটির সামনে অসংলগ্ন কথা বলা শুরু করেন মনি মোহন। তিনি কমিটির কাছে বলেন ‘কিভাবে খাতা পেয়েছি আমার মনে নেই। আমাকে কেন খাতা বেশি দেয়া হয়েছে তাও জানি না।

সূত্র বলছে, মনি মোহন সবই জানেন কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী সেজে সব দোষ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে উচ্চতর গণিত ছাড়াও অন্য সব বিষয়ে জালিয়াতি হলেও সেগুলো সামনে আসছে না। ১৮ শিক্ষার্থী কেবল উচ্চতর গণিত বিষয়ে নয় ১৩টি বিষয়েই জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু উচ্চতর গণিত ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটিও কথা বলছেন না বলে সূত্র জানিয়েছে।

নিরীক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, আমার শিক্ষকতার বয়স ২৫ বছর। ১০ বছর ধরে আমি খাতা নিরীক্ষণের কাজ করছি। কিন্তু ১৮টি খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমার সন্দেহ হয়। আগে আমরা নিজেরাই উত্তরপত্রে নিজেদের মত করে নম্বর দিতাম। কিন্তু সৃজনশীল হওয়ায় প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে দেয়া হয়। আমরা খাতা নিরীক্ষণের সময় ওই প্রশ্নপত্রে যে নিয়মে অংক করা সেইভাবে মূল্যায়ন করে নম্বর প্রদান করি। খাতায় মিলিয়ে দেখিয়ে বোর্ড থেকে দেয়া উত্তরপত্রে যেভাবে অংক করা ঠিক সেভাবেই ওই ১৮টি খাতায় অংক তুলে দেয়া হয়েছে।

উত্তরপত্রে একটি অংক ১৩ লাইনে শেষ হয়েছে। ওই পরীক্ষার্থীর খাতায়ও ঠিক সেইভাবে ১৩ লাইনে অংক উঠানো। উচ্চতর গণিতে লিখিত পরীক্ষায় নম্বর ৫০। এর মধ্যে ‘ক’ অথবা ‘খ’ যেকোন গ্রুপ থেকে কমপক্ষে দুটিসহ ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। চারজন পরীক্ষার্থী ফাঁস করা উত্তরশিট দেখে সব অংকই একই গ্রুপ থেকে তুলে রেখেছেন। ফলে তাদেরকে ৪০ দেয়া হয়েছে। বাকি ১৪ জন পেয়েছেন ৫০ এর মধ্যে ৫০।

শুধু তাই নয় একটি অংক আসছে যেটি করতে গেলে আমারও অন্তত ১০ বার কাটা ছেড়া করতে হবে। অথচ ১৮ পরীক্ষার্থী এমন নিখুঁতভাবে অংকটি তুলে রেখেছেন যা দেখলে যে কারোই সন্দেহ হবে। বিষয়টি সন্দেহ হবার পরে আমি প্রধান পরীক্ষককে অবহিত করি। তিনি চেয়ারম্যানের স্যারের কাছে খাতাগুলো নিয়ে যান। এর পরই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। ওই ১৮ শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে খাতায় কিছু না লিখে সাদা খাতা জমা দেন। প্রত্যেকটি খাতায় একটি লাল দাগ টানা ছিল।

এরপর খাতা বোর্ডে জমা দেয়ার পর রেকর্ড সাপ্লাইয়ার খাতাগুলো বের করে কোন একজনকে দিয়ে ১৮ জনের খাতায় হুবহু উত্তরপত্রে করা অংকগুলো তুলে রাখেন। ওই ১৮ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন কেন্দ্রে হলেও সব খাতা যায় পরীক্ষক মনি মোহনের কাছে। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান এরপর ১৮ শিক্ষার্থীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এক পর্যায় পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্র জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা জানান, টাকার বিনিময়ে গোবিন্দ চন্দ্র পাল এ কাজটি করেছেন। এরপর ১৮ পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত করা হয়। শুধু তাই নয় আগামী তিন বছর পর্যন্ত তারা পরীক্ষায় বসতে পারবে না।

বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে এখনো প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তার আগেই ফৌজদারী আইনে থানায় মামলা দায়ের করেছি।

কেএসটি
 

আরও পড়ুন