‘দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করছিলাম। পাট পাইছি পৌনে এগারো মণ। সেই পাট হাটে বেচছি ১৯ হাজার ৭৮০ টাকায়। দাম পাইছি মণপ্রতি ১ হাজার ৮৪০ টাকা। দুই বিঘায় আবাদ করতি খরচ হইছিল ১৯ হাজার ২৪০ টাকা। নিজের মজুরি বাদে লাভ হইছে দুই বিঘায় ৫৪০ টাকা। নিজের মজুরি ধরলে একটাও লাভ নেই। বরং লোকসান।’
এ বছর পাটের আবাদে লাভ কেমন, জানতে চাইলে আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই নিকাশ দিচ্ছিলেন পাটচাষি জয়নাল চৌধুরী। জয়নাল চৌধুরীর বাড়ি উপজেলার জাবরকোল গ্রামে।
‘দুই বিঘা জমিতে সোলা (পাটখড়ি) হইছে আনুমানিক ২১০০ থেকে ২২৫০ হাতা (আটি)। ১০০ হাতা সোলার বর্তমান বাজারদর ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। সবগুলো সোলা বেচা গেলে পাওয়া যাবে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৯২৫ টাকা। ৬০-৮০টি সোলা একত্রে বেঁধে করা হয় একটি হাতা। বলতে গেলে পাট আবাদে এখন সোলাই লাভ।’ বলছিলেন জয়নাল।
জয়নালের কথায়, ‘জমি চাষের জন্য হ্যারোর (চাষযন্ত্র) মালিককে দিতে হইছে ১৬০০ টাকা। হাজার ৪০ টাকায় কিনেছিলাম বীজ। পাট কাটতি লাগছিল ৭ হাজার ৬০০ টাকা। পাট কাটছিল ১৯ জন শ্রমিক। পাট ধোয়ায় খরচ পড়েছে ৯ হাজার টাকা। ১৮ জন শ্রমিক করছিল ধোয়ার কাজ। সব মিলিয়ে জমি থেকে পাট ঘরে তুলতি খরচ পড়েছিল ১৯ হাজার ২৪০ টাকা।’
শুধু জয়নালই নন, ন্যায্য দাম না পেয়ে উপজেলার পাটচাষিদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে হতাশার ছাপ।
সরেজমিনে নতুনবাজার হাটে দেখা গেল, নতুন পাটের বেচাকেনা চলছে। পাটের বেশ আমদানি ছিল হাটে। পাট কিনছিলেন পাটের ব্যবসায়ী মজনু হোসেন। বলছিলেন, বর্তমানে ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে পাটের কেনাবেচা চলছে। প্রথম যখন পাট হাটে উঠেছিল, তখন কেউ কেউ ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছিল। শুরুতে বাজারদর সর্বনিম্ন ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। এখন দাম কম। মজনুর বাড়ি উপজেলার শাহপুর গ্রামে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এ বছর উপজেলায় ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে তোষা ও মেস্তা পাট ছিল। পাট কাটা শেষ। এ বছর পাটের ফলন হয়েছে সর্বনিম্ন ৫ মণ, ঊর্ধ্বে ১১ মণ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান রশীদ হোসাইনী বলছেন, এ বছর পাটের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না পাটচাষিরা। ভালো দাম না পেলে কৃষক এ আবাদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলেও মন্তব্য করেন হোসাইনী।
এনআই