• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ০৯:৩৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ০৯:৩৬ এএম

নানা সমস্যায় জর্জরিত সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন

নানা সমস্যায় জর্জরিত সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন

বাংলাদেশে রেলওয়ের একটি ঐতিহ্যময়, প্রাচীন ও বৃহত্তম স্টেশন সান্তাহার জংশন স্টেশন। ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই জংশন স্টেশনটি শুধু ব্রড গেইজ লাইনে চলাচলের সময় এটি শুধু ‘সান্তাহার স্টেশন’ নামে পরিচিত ছিল। অবিভক্ত ভারতের উত্তরবঙ্গ ও আসাম, ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে সান্তাহারকে সংযুক্ত করে পূর্ব দিকে আরো একটি রেললাইন মিটার গ্রেজ ১৯০০ সালে নির্মিত হলে স্টেশনটি সান্তাহার জংশন স্টেশনে পরিণত হয়। ত্রিমুখি রেলের সংযোগ স্থল এবং দুই জেলার মোহনায় অবস্থিত এই স্টেশনটি নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই স্টেশন থেকে সরকারের আয় উল্লেখ করার মতো। 

গত জুন ২০১৮ থেকে মে ২০১৯ পর্যন্ত সান্তাহার রেল স্টেশন থেকে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ ৫৭ টাকা। এই আয় শুধু আন্তঃনগর ট্রেন থেকে। লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলো বে-সরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ আয় হওয়া সত্ত্বে জনবল সংকট, স্টেশনের সীমানা প্রাচীর না থাকা, পানির সমস্যা, অবকাঠামো প্রভৃতি সমস্যার কারণে স্টেশনটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

সান্তাহার স্টেশন মাস্টারের অফিস সূত্রে জানা যায়, এই রেলওয়ে স্টেশনটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ৩৯টির মতো আন্তঃনগর, মেইল, সাধারণ ট্রেন চলাচল করে। প্রয়োজনের তুলনায় বর্তমানে চরম জনবল সংকটে স্টেশনটি। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সহকারী স্টেশন মাস্টারের পদ ১৩টি থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন। অনেক সময় পোটার দ্বারা এই পদের কাজ সম্পূর্ণ করতে হয় বলে জানা গেছে। জামাদারের পদ আছে ৪টি, কর্মরত ১ জন। পয়েন্টসম্যান পদ সংখ্যা ৯টি, কর্মরত ৮ জন। গেট কিপারের পদ আছে ৬টি তার মধ্যে একজন স্থায়ীভাবে বাকিরা চুক্তিভিত্তিক। স্টেশনটির মোট মঞ্জুরি পদ সংখ্যা ৫৯টি, বর্তমানে কর্মরত আছে ২৬ জন। ৩৩টি পদই শূন্য অবস্থায় আছে। প্রথম শ্রেণী পুরুষ ও মহিলা বিশ্রামাগারের ২ জন আয়া থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে দুইটি পদই শূন্য। একজন আছেন চুক্তিভিত্তিক। ২য় শ্রেণী বিশ্রামাগারে কোন আয়া নেই। বিশ্রামাগারগুলোতে অধিক সময়ে পানি সরবরাহ থাকে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এদিকে, স্টেশনটিতে বর্তমানে যাত্রীদের বসার কিছু আসনের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু নানা অব্যস্থাপনার কারণে যাত্রী সেবা তেমন নেই। সান্তাহার জংসন স্টেশনটিতে পানির সমস্যা প্রকট। দুইটি টিউবওয়েলের মধ্যে দুইটিই বর্তমানে নষ্ট। একটি পানির ট্যাপ থাকলেও সেটিও বেশির ভাগ সময়ে নষ্ট থাকে। ফলে যাত্রীদের পানি সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। স্টেশনটিতে এক সময় ‘মুসলিম’ ও ‘হিন্দু’ নামে দুটি হেটেল থাকলেও বর্তমানে দুটিই বন্ধ। উচ্চ শ্রেণীর ভোজানালয়টি বন্ধ হয়েছে কয়েক বছর আগে। ফলে প্রথম শ্রেণীর এই স্টেশনটিতে যাত্রীদের জন্য কোন খাবারের ব্যবস্থা নেই। 

প্রথম শ্রেণীর রেলওয়ে এই স্টেশনটিতে গরু, ছাগলের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কে বা কারা প্রতিদিন গরুগুলোকে স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে যায়। এছাড়া, বেশকিছু দিন থেকে স্টেশনটিতে মোবাইল চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টেশনটিতে অবৈধ পান, সিগারেটের দোকানের ছড়াছড়িও রয়েছে। স্টেশনটির কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিনা টিকিটের যাত্রীদের শনাক্ত করা যায় না এবং স্টেশনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও ছিনতাইকারীরাও ঢুকে পড়ে। 

এ ব্যাপারে সান্তাহার স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম বলেন, বাউন্ডারি ওয়াল বা সীমানা প্রাচীর না থাকায় এই স্টেশনটি কাঙ্ক্ষিত আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং জনবল সংকট থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না।

কেএসটি

আরও পড়ুন