• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯, ০৩:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯, ০৩:১৪ পিএম

পাখির গ্রাম আলিদেওনা, উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি 

পাখির গ্রাম আলিদেওনা, উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি 
বাঁশের ঝাড়ে শামুকখোলের বাসা - ছবি : জাগরণ
আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার দাবি

নওগাঁর মহাদেবপুরের সনাতন ধর্মাম্বলী অধ্যুষিত গ্রাম আলিদেওনা। বাঁশঝাড় ও গাছে গাছে হাজারো পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকে গ্রামটি। মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে খাজুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই গ্রাম। কিন্তু এই গ্রামের রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত দিকে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। এখানে গড়ে ওঠা বিভাগের বৃহত্তম পাখির অভয়ারণ্যকে জাতীয়ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে হঠাৎ করেই এই গ্রামের বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন বড় বড় গাছে আসতে শুরু করে নানা প্রজাতির পাখি। আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে পাখি কলোনি। গ্রামের সাধারণ মানুষের উদ্যোগে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে আশ্রয় নেয়া হরেক রকম পাখিদের মধ্যে রয়েছে- লাল বক, সাদা বক, শামুকখোল, রাতচোরা, সারস, মাছরাঙা, পানকৌড়ি ও বিভিন্ন প্রজতির ঘুঘুসহ নাম না জানা নানা রংয়ের হাজার হাজার পাখি। এ কারণে বর্তমানে আলিদেওনা গ্রামের নাম হয়েছে পাখির গ্রাম। 

পাখির গ্রামে এসে মুগ্ধ হয়ে ওঠেন নওগাঁ জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার পর্যটকরা। স্থানীয়রা গ্রামটিকে ‘পাখি শিকার মুক্ত’ এলাকা ঘোষণা করেছেন। গ্রামের সীমানায় কোনো পাখি প্রবেশ করা মানে পাখিটি নিরাপদ। আর এ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের সবাই। পাখি শিকার রোধে গ্রামবাসী নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। ফলে সারা বছরই সেখানে হাজারো পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে বাচ্চা উঠানোর মৌসুমে শামুকখোল ও বকের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে গ্রামটিতে প্রতিদিনই অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। 

গ্রামটিতে প্রবেশের সময় দেখা যায়- সরু রাস্তার দুই ধারে থাকা গাছে গাছে লাগানো রয়েছে বিভিন্ন পাখির আদলে সাইনবোর্ড। এগুলোতে লেখা রয়েছে- পাখি শিকার রোধে বিভিন্ন আইন ও সচেতনতামূলক উপদেশ। ‘পাখি শিকার করবেন না, পাখি মারবেন না, পাখিরাও আমাদের মতো বাঁচতে চায়, পাখি এ সমাজের পরম বন্ধু, তাদের আগলে রাখতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’ ইত্যাদি। আর এ কাজে গ্রামের মানুষদের এক কাতারে এনে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছেন স্থানীয় আলিদেওনা পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নির্মল বর্মন। পাখিদের মেলার কারণে গ্রামটিও যেন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। নতুন প্রাণের স্পন্দনে জেগে ওঠা গ্রামবাসী পাখিদেরও আগলে রেখেছেন আপন সন্তানের মতোই। ইচ্ছাকৃতভাবে না হোক, কোনো শিকারী ভুলেক্রমেও এ গ্রামে প্রবেশ করলে তার কপাল মন্দ।

আলিদেওনা পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত নির্মল বর্মন বলেন, পাখিদের প্রতি আলিদেওনা গ্রামের মানুষের ভালবাসার কারণেই এখানে পাখিদের আবাসভূমি গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বা অন্য কোনো কারণে বাসা থেকে পড়ে যাওয়া বাচ্চাগুলোকে গ্রামবাসীরা যত্ন সহকারে মা পাখিদের বাসায় পৌঁছে দেয়। তিনি বলেন, গ্রামটিকে সরকারিভাবে পাখিদের অভয়ারণ্য করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা বর্তমানে সময়ের দাবি। কিন্তু পাখি ঘেরা এই এলাকার রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল। বর্ষা মৌসুমে পর্যটকরা রাস্তার কারণে গ্রাম ঘুরে পাখি দেখতে পান না। নেই দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বসার কোনো স্থান। 

তিনি আরো বলেন, পাখির মল পরিষ্কারের নেই কোনো ব্যবস্থা। পাখির মলের বিষক্রিয়ায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে অন্যান্য গৃহপালিত পশুপাখির। চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। তিনি বলেন, প্রয়োজন অনেক কিছুই। আরো প্রয়োজন কর্তা ব্যক্তিদের সুদৃষ্টি। কারণ তারা আশ্বাস দিতে পছন্দ করেন, কিন্তু এর বাস্তবায়ন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা থাকে না। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে। আমি দীর্ঘদিন থেকে এই সমস্যাগুলো সরকারের বিভিন্ন মহলকে জানিয়েছি। আজ পর্যন্ত কোনো উপকার পাওয়া যায়নি। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, জেলার আলিদেওনা গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী পাখি গ্রাম হিসেবে সারাদেশের মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। পাখির অভয়ারণ্যসহ গ্রামটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি।

এফসি

আরও পড়ুন