• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯, ০৯:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯, ০৯:২১ পিএম

গাইবান্ধায় ঐতিহ্যবাহী প্রাণের মেলা নৌকাবাইচ

গাইবান্ধায় ঐতিহ্যবাহী প্রাণের মেলা নৌকাবাইচ
গাইবান্ধায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার একটি দৃশ্য - ছবি : জাগরণ

প্রতিবছর বর্ষার শেষে শরৎকাল এলেই শুরু হয় দীর্ঘদিনের অপেক্ষায় থাকা ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই একটি দিনের আনন্দ উদ্‌যাপনের জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে অসংখ্য মানুষ। হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-যুবা দল বেঁধে সমবেত হয় ঘাঘট নদীর দুই পাশে।

চারদিকে শুধু ঝপাৎ ঝপাৎ বইঠার শব্দ। কারো দিকে কারো নজর দেয়ার সময় নেই। উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের টানটান উত্তেজনা কোন নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে আবার পিছিয়ে পড়া নৌকার জন্যও তাদের উৎসাহের কমতি নেই। জোরছে মারো, আরও জোরে।

এভাবেই শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মাঝি-মাল্লাদের ‘মারো টান হেইয়ো, আরো জোরে হেইয়ো’সহ ঢোলের তালে তালে বইঠা মারা। হেইয়ো রে হেইয়ো...আওয়াজ করে পানিতে ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ তুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অসাধারণ দৃশ্য আর হাজার হাজার দর্শকের আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে গাইবান্ধায় হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।

রোদেলা বিকেলে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। ঘাঘট পাড়ে অপরূপ শোভা বিলিয়ে ফুটেছে শরতের কাশফুল। সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ভেড়ামারা ব্রিজসংলগ্ন কিশামত বালুয়া এলাকায় ঘাঘট নদীর দুই পাড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের ভিড়। সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। আর নদীর বুকে কারুকাজ ও নানা রঙে সাজানো ছিপছিপে ২৫টি নৌকা। বাংলার বাঘ, মা-বাবার দোয়া, শহীদবাগ এক্সপ্রেস, স্মৃতি একাত্তর, বাংলার বাহাদুর - কত যে সুন্দর নাম। প্রতিটি নৌকায় বইঠা হাতে ২০ থেকে ৩০ জন মাঝি।

দাঁড়ের মাঝি নৌকার পেছনে, মাঝখানে নির্দেশক। ঢোল-কাঁসা-করতাল-মন্দিরা বাজিয়ে বাদক আর গায়েনরা মাঝিদের উৎসাহ দিতে নৌকার মাঝখানে। কোনো নৌকায় মাঝিদের গায়ে একই রকম গেঞ্জি, সবার মাথায় আবার একই রঙের রুমাল বা গামছা বাঁধা। গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় উৎসবমুখর মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঘাঘট নদীতে এ যেন এক প্রাণের মেলা।

শনিবার সকালে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। আয়োজক কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ফয়জার রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ, পৌর মেয়র অ্যাড. শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন, প্যানেল মেয়র তানজিমুল ইসলাম পিটার, গাইবান্ধা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি আলমগীর কবীর বাদল, হায়দার আলী, আব্দুস সবুর, মো. আবু তালেব মিয়া, মো. সেলিম প্রামানিক, আলতাফ হোসেন, মিজানুর রহমান মিজান, আব্দুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে উৎসব-আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল পুরো এলাকা। প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ বাইরের জেলা থেকেও অংশ নেয় বেশ কয়েকটি নৌকা।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রথম বিজয়ীকে একটি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় বিজয়ীকে একটি ফ্রিজ, তৃতীয় বিজয়ীকে একটি এলইডি টিভি ও চতুর্থ বিজয়ীকে একটি মোবাইল ফোন দেয়া হয়।

নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি ফয়জার রহমান জাগরণকে বলেন, গাইবান্ধার মানুষ বছর ধরে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। অনেকে গ্রামের বাইরে তাদের কর্মস্থলে বসবাস করলেও এদিন তারা একত্রিত হন। সময় কাটান একেবারেই গ্রাম্য পরিবেশে আর গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নে অবস্থিত ঘাঘট নদীতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিবছর স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী ইব্রাহীম খলিল উলফাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম লুডু, মুক্তিযোদ্ধা দুলা মিয়া, প্রকৌশলী বাদল প্রামানিক, সারোয়ার হোসেনসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় একই স্থানে ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এনআই

আরও পড়ুন