নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রেমসংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে প্রেমিকার আত্মীয়স্বজনরা। এই অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করে পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের পূর্বচরবাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ছাত্র মো. রিয়াজ উদ্দিন (১৪)। তবে এটা আত্মহত্যা নয়, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে নিহত ছাত্রের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠীরা।
নিহত রিয়াজ উদ্দিন ৭ নং পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের চর নাঙ্গুগুলিয়া গ্রামের চাকরিজীবী আবুল কাশেমের একমাত্র সন্তান।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তার সহপাঠীসহ এলাকাবাসী শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। খবর পেয়ে চরজব্বার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত রিয়াজের বাবা আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, পূর্বচরবাটা গ্রামের জসিম উদ্দিনের মেয়ে পূর্বচরবাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা ইয়াসমিন নাদিয়ার সাথে তার ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রথমে রিয়াজ রাজি না থাকলেও নাদিয়া তার পিছু ছাড়ত না। রিয়াজের সাথে প্রেম করার জন্য তাকে একাধিক চিঠি দেয় নাদিয়া।
রিয়াজের বাবা আরো বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) স্কুল ছুটির পর রিয়াজ বাড়ি আসার পথে নাদিয়া তাকে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠি দেয়ার সময় দেখে ফেলে নাদিয়ার আত্মীয় পূর্বচরবাটা গ্রামের বোরহান উদ্দিন ব্যাপারির ছেলে আলা উদ্দিন (১৮), বেলায়েত হোসেন মাস্টারের ছেলে ইকবাল হোসেন শাকিব, মনতাজ মাস্টারের ছেলে রাব্বি (১৯), ছান্দু ডুবাইওয়ালার ছেলে বাবুয়াসহ অজ্ঞাত ২-৩ জন। এ সময় তারা রিয়াজকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। রিয়াজকে মারধরের খবর পেয়ে তার সহপাঠীরা দৌড়ে এলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। রিয়াজকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে সহপাঠীসহ এলাকাবাসী।
পরদিন শুক্রবার সকালে রিয়াজের শরীরে ব্যথা অনুভব হলে সে চিৎকার করতে থাকে। পরে বাড়ির লোকজন তাকে প্রথমে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিয়াজকে মৃত ঘোষণা করেন।
চরজব্বর থানার পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার দুপুর ২টায় রিয়াজকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাদের পাওয়া যায়নি।
চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ সাহেদ উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। এদিকে মেধাবী ছাত্র রিয়াজকে হারিয়ে শোকে কাতর এলাকাবাসী। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন নিহতের মা কমলা বেগম।
এনআই