• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ১২:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ০১:০০ পিএম

শোভন-রাব্বানীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার

ছাত্রলীগে আসছে নতুন নেতৃত্ব!

ছাত্রলীগে আসছে নতুন নেতৃত্ব!
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রব্বানী

নানা অনিয়ম,বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও আর্থিক লেন-দেনের  পাহাড় সমান অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে। একারণে খুব দ্রুত তাদের সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।  

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শোভন-রাব্বানীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। 

আওয়ামী লীগের সিনিয়র এবং হেভিওয়েট নেতারা বলছেন,শোভন-রাব্বানীর দুনিয়া ছোট হয়ে আসছে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে থাকা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য এবার বন্ধ হয়ে গেছে গণভবনের দরজা। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে থাকায় পাশে পাচ্ছেন না কাউকে। আলোচনা চলছে দুই পদে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কিছুদিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। পরবর্তীতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে নেতাদের মুখে এ গুঞ্জন চলছে।
 
জানা যায়, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল এজেন্ডা ছিলো রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন এবং কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা। কিন্তু সেখানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করে কমিটি ভেঙে দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে বিতর্কিতদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়া, দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি অভিযোগ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

এদিকে গণভবন থেকে এমন খবরের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন শোভন-রাব্বানী। তবে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন শোভন-রাব্বানী। পদ টিকিয়ে রাখতে যোগাযোগের চেষ্টা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে। তবে কোনো উপায় কাজে দেয়নি। সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাস ভবন গণভবনে প্রবেশের পাসও বাতিল করা হয়।

সংশ্লিষ্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুয়ায়ী ৫টি কারণে শোভন-রাব্বানীর উপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী।  ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তাদের এমন অনিয়মে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। 
প্রথমত, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ে না থাকা। গত ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগেরই একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যান নির্ধারিত সময় সকাল ১১টায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যান বিকেল তিনটায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন মহিলা কলেজের সম্মেলন হওয়ার পর দেড় মাস চলে গেলেও কমিটি গঠন না করা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় সম্মেলনের এক বছর পর ১৩ মে। তবে সম্মেলনের আড়াই মাস পর রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরই তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কমিটি থেকে বিতর্কিত ১৯ জনকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েও বাস্তবে বাদ না দেয়া।

শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ। অভিযোগ আছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে পদ দেয়া হয়। জেলা কমিটিকে না জানিয়ে সরাসরি অর্থের বিনিময়ে সাতটি উপজেলা কমিটি গঠন করা। নারায়ণগঞ্জ এবং কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে নিজস্ব লোক ঢুকানো। আর্থিক সমঝোতা না হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ইডেন কলেজের কমিটি গঠনে দেরি করা।

পাশাপাশি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আছে। এই অভিযোগগুলো হলো বিবাহিত, বহু বিবাহ, অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত, জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে যুক্ত, শিক্ষকের ওপর হামলাকারী প্রভৃতি। এ সব অভিযোগে অভিযুক্তদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেয়ার পেছনে আর্থিক লেনদেন আছে বলে ধারণা করা হয়।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত শোভন-রাব্বানীকে পদচ্যুতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে আগামী শনিবার গণভবনে আসন্ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হতে পারে। ওই দিনই শোভন-রাব্বানীকে দলীয় পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত  বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে ক্ষুদ্ধ হওয়ার মতো কোনো তথ্য যেহেতু এসেছে এবং তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাই এই জায়গাটায় কারো কোনো ধরণের ভিন্ন চিন্তা করার উপায় নেই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন যদি ছাত্রলীগের এই কমিটির ব্যাপারে নতুন কোনো বিবেচনা আসে, সংযোজন বা পরিবর্তনের কোনো প্রশ্ন আসে, আমি মনে করি নেত্রী নিজেই করতে পারেন। যেহেতু কমিটি তিনিই করেছেন, কাজেই কমিটির ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন-সংযোজনের প্রয়োজন হয় সেটা নেত্রী নিজেই করবেন এবং নেত্রী নিজে করাটাই সঙ্গত। ছাত্রলীগের আগাম সম্মেলনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, আমি এ ধরনের কোনো ইঙ্গিত পাইনি, পেলে জানাব।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনিয়মের বিষয়গুলো আপনি কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা আমাদের পার্টির একদম ভেতরের ব্যাপার। ছাত্রলীগের বিষয়টি নেত্রী সরাসরি নিজেই দেখছেন। বিষয়টি এখন যে পর্যায়ে আছে, সিদ্ধান্ত আকারে কোনো কিছু যদি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় না যায়, এর আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকাণ্ডে আপনারা সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি এই মন্তব্য এখন করব না। আমি সব সময় ভালো কাজের প্রশংসা করি, দলের ভেতরে খারাপ কাজ হলে যদি কাউকে তিরস্কার করতে হয়, আমি সেটার পক্ষে। ভালো কাজের পুরস্কার দেওয়া উচিত। এটা আমরা আওয়ামী লীগে করে থাকি।

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন