• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৯:৩৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৯:৩৪ এএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল

নির্মিত নতুন ভবন চালু হয়নি ১ বছরেও

নির্মিত নতুন ভবন চালু হয়নি ১ বছরেও

এক বছর আগে শেষ হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করা হয়েছে। তবে এখনও চালু হয়নি আধুনিক সুবিধাসংবলিত ভবনটি। নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি নেই লোকবল। প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রশাসনিক অনুমোদন না পেলে নতুন ভবন চালু করা সম্ভব নয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগীর ভিড়ে পা রাখার জায়গা নেই। ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী প্রায় ২৬০ জন। পুরো ফ্লোরজুড়ে রোগীদের বিছানা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তবে নতুন ভবনে শুধু বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা সেখানে রোগী দেখছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৪ জুন ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পায় হাসপাতালটি। তবে ১৬ বছর ধরে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে এ হাসপাতালটির কার্যক্রম। ৫০ শয্যার প্রয়োজনীয় ২১ চিকিৎসকের জায়গায় বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১২ জন। 

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে এক জনসভায় ১৫০ শয্যার নতুর ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালের ১৬ মে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে হাসপাতালের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়।

এদিকে, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট ৬৬ জন চিকিৎসক ও স্টাফের জন্য ১২০ পৃষ্ঠার একটি চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন। ২৯ আগস্ট চাহিদাপত্রটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) শহিদ মো. সাদিকুল ইসলাম স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন। স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত হবে বলে জানায় সূত্রটি।

হাসপাতাল ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হস্তান্তর ছাড়াই গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫০ শয্যার নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের এক বছর পরেও বেডে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন স্থাপনসহ বেশকিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের কাছে এখনও হস্তান্তর করেনি ভবনটি।

সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, ৫০ শয্যারই পর্যাপ্ত জনবল নেই। চিকিৎসক নেই। ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের ১৬ বছর পর জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। চাহিদাপত্রটি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২৫০ শয্যার নতুন ভবন চালুর আগে জনবল নিশ্চিত করতে হবে। লোকবলের নিয়োগ, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত ভবনটিতে কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হারুনুর রশীদ জানান, ১০ বছরে হাসপাতাল সেবা কমিটির কোন মিটিং হয়নি। ১৫০ শয্যার যে ভবন উদ্বোধন করে দিয়ে গেছেন সাবেক সংসদ সদস্য তা এখনো হস্তান্তরই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবার গণপূর্ত বিভাগও হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করেনি। ২০০৩ সালে এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে যে জনবল দরকার তার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ৫০ শয্যার জন্য যে পরিমাণ জনবল দরকার সেটিও নেই এখানে।

১০০ শয্যার জনবলের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া গেলে হাসপাতালের সেবার মান কিছুটা উন্নত হবে। এছাড়াও ১৫০ শয্যার যে ভবন হস্তান্তরের প্রক্রিয়া রয়েছে এটাকে ত্বরান্বিত করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ করেছি যেন অসম্পন্ন কাজ দ্রুত শেষ করে। ভবন হস্তান্তর হয়ে গেলে ২৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনও করে ফেলব এবং জনবলের জন্য প্রচেষ্টা চালাব।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন হেলথ পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এইচপিএনএসডিপি) আওতায় নির্মিত হাসপাতাল ভবনে রোগীদের জন্য রয়েছে  ১৫টি কেবিন ব্লক, ৫টি অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। এছাড়া রয়েছে আইসিইউ বিভাগ, এসডিইউ বিভাগ, সিসিইউ বিভাগ, সিটি স্ক্যান, বহির্বিভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিজস্ব বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, চলাচলের জন্য তিনটি সিঁড়ি ও দুটি বেড লিফ্ট। এগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেএসটি

আরও পড়ুন