• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৮:২৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৮:২৪ এএম

রিকশা চালকের সঙ্গে রিফাতের শেষ কথা

‘চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান’ 

‘চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান’ 

‘ওদিকে মারামারি হয়, কারে কে মারে আমি মাইনষের ভিড়ে দেখতে পারি নাই। একটা ছেলে গায়ে রক্তমাখা, রক্ত ঝইর‌্যা পড়তেছিল, সে হাইটা আইসা আমার রিকশায় উঠেই কইলো, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান’।
 
রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন রিকশা চালক দুলাল। দুলালের বাড়ি বরগুনা সদর ইউনিয়নের ফরাজীরপুল এলাকায়। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আসার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। অভিযোগ তোলা হয়েছিল, মিন্নি তার স্বামী রিফাতকে নিয়ে হাসপাতালে যাননি, রিফাত একাই হাসপাতালে গিয়েছিল। কিন্ত হাসপাতালের সামনের সিসিটিভি ফুটেজে মিন্নিই রিফাতকে হাসপাতালে নিয়েছিল বিষয়টি স্পষ্ট হয়। 

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুলালের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনি ধান মাড়াইয়ের কাজে গিয়েছেন। বাড়ি থেকে একটু দূরেই ফরাজী বাড়ির সামনে রিকশা চালক দুলালকে পাওয়া যায়। তিনি এসময় ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরিচয় জানার পর প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজী হন তিনি।
 
ঘটনার বিবরণে দুলাল বলেন, ওইদিন কলেজ সড়কে ‘খ্যাপ’ নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের দিক যাইতে পারি না। শুনলাম সামনে কারা যেন কারে মারতেছে। প্যাসেঞ্জারকে নামিয়ে দিয়ে আমি রিকশা ঘুরাইয়া কেবল দাঁড়াইছি, এসময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাইট্টা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। আমি দেখলাম গলা ও বুকের বামপাশ কোপে কাইট্টা রক্ত বাইর হইতেছে। হের জামাডা টাইন্না আমি গলা ও বুকে চাইপ্পা ধইরা হেরে কইলাম আপনে চাইপ্পা ধরেন, আমি চালাই। আমি হাসপাতালে যাওনের জন্য কেবল সিটে বসছি, চালামু,  টিক সেই মুহুর্তে একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইর‌্যা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই। 

দুলাল বলেন, এক মিনিটের মত রিফাত ঘার সোজা করে বসে ছিল, কিন্ত এরপর সে মেয়েটির কাঁধে ঢলে পরে যায়। আর ঘাঁর সোজা করতে পারেনি। আমাদের রিকশার পাশাপাশি একটা লাল পালসার মোটরসাইকেলে দুইটা ছেলে যাচ্ছিল। মিন্নি চিৎকার করে তাদের কাছে রক্ত থামানোর সাহায্য চাইছিল, ওরা সাড়া দেয়নি। আমার কাছে মিন্নি ফোন চায় তার বাড়িতে কল করে জানানোর জন্য, কিন্ত আমার ফোন নাই। পরে ওই মোটরসাইকেলের ছেলেদের কাছেও মিন্নি ফোন চায়, বলে ভাই আপনাদের একটা ফোন দেন, আমি একটু বাবার কাছে ফোন করবো। কিন্ত তারা বলে, আমাদের কাছে ফোন নাই, তুমি হাসপাতালে যাইতেছো যাও। হাসপাতালের গেট থেকে ঢোকার সময় মিন্নি একজন লোককে ডাক দেয়। রিকশা থামানের সাথে সাথে ওই লোক দৌড়ে এসে রিফাতের অবস্থা দেখেই আমায় নিয়ে স্ট্রেচার আনতে যায়। আমি আর সেই লোক স্ট্রেচার নিয়ে এসে রিফাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে তুলে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি। এরপর রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্স করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় ও কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার কাগজপত্র এখনো পুলিশের কাছেই আছে।

মিন্নির ডাকে ছুটে এসেছিলেন যিনি 
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে ও রিকশাওয়ালা দুলালের বর্ণনা মতে, রিকশা থামতেই সাদা গেঞ্জি পড়া একজন লোক দৌড়ে এসে স্ট্রেচার এনে রিফাতকে দ্রুত ওটিতে নিয়ে যান এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি ছিলেন আমিনুল ইসলাম মামুন। তিনি বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি একই সাথে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী। মামুনের সাথেও কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, মিন্নির ডাক শুনেই দ্রুত আমি ছুটে আসি। রিফাতের অবস্থা দেখে আমি দ্রুত রিকশা চালক ভাইকে নিয়ে হাসপতালের জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচার নিয়ে আসি। এসময় রিফাত রিকশায় মিন্নির কাঁধে ভর করে বসেছিল। আমি, রিকশা চালক মিন্নি তিনজনে মিলে রিফাতকে ধরে স্ট্রেচারে তুলি। দ্রুত তাকে ওটিতে নিয়ে যাই। এসময় ডাক্তারের লিখে দেওয়া স্লিপ নিয়ে আমি তিনবার ফার্মেসি থেকে এক হাজার চার’শ টাকার ওষুধ কিনে আনি। রিফাতের শরীর থেকে প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছিল। কিছুতেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। চিকিৎসক কোপের ক্ষত স্থানে গজ ও তুলো দিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দ্রুত বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে গেটে নিয়ে আসি। এর মধ্যেই রিফাতের বন্ধু জনসহ অন্যরা সেখানে আসেন। মিন্নির চাচা সালেহ ও পরে মিন্নির বাবা কিশোরও চলে আসেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। মিন্নি বারবার যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্ত তার চাচা সালেহ ও বাবা কিশোর যেতে দেয়নি। 
মামুন বলেন, একজন মানুষকে বিপদে সহায়তা করা মানবিক দায়িত্ব, সে যে কোনো মানুষই হোক না কেন। আমিও সেটাই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্ত আফসোস রিফাতকে বাঁচানো যায়নি।

কেএসটি

আরও পড়ুন