• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯, ০৪:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯, ০৪:৪৪ পিএম

বশেমুরবিপ্রবি ভিসি হটাও 

পিঠে কালশিটে দাগ নিয়ে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

পিঠে কালশিটে দাগ নিয়ে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

গোপালগঞ্জের বশেমুরবিপ্রবি এখন উত্তাল, ভিসি হটাও আন্দোলনকারীদের গগনবিদারী স্লোগান সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ৬ম দিনে গড়ালো। এ আন্দোলনের আবেগ সময়ের ব্যবধানে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, আন্দোলনকারীদের সংখ্যাও বাড়ছেই।

গোপালগঞ্জের মুক্তমনা মানুষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতাও ঘোষণা করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে গোপালগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ সংহতি প্রকাশ করেছেন।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর প্রায় আড়াইটা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জামার বোতাম অর্ধেক খোলা ভিসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষার্থীকে মুরব্বী জিজ্ঞাস করেছিলেন, তুমি দুপুরে কিছু খেয়েছো? শিক্ষার্থী তার জামা খুলে ভিসি’র লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর লাঠির আঘাতে পিঠের কয়েকটি ক্ষতস্থানের কালশিটে দাগগুলো দেখিয়ে অবলীলায় বললো, ‘এই যে খেয়েছি’।  ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় রক্তের দাগ লেগে গেল গোপালগঞ্জের জনপদ।

আন্দোলনকারী প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী বলেন, মারপিটকে দুপুরের খাবার মনে করে, বাঁচা মরার কথা না ভেবে, আন্দোলন আরো বেগবান করে হলেও ভিসিকে পদত্যাগ করিয়েই ছাড়ব।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরে বলছেন, দুর্নীতিবাজ, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যকারী ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক টর্চার সেলে পরিণত করেছে। এই সকল দুর্নীতির সাথে রয়েছে প্রক্টরসহ প্রশাসনের বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা। বিএনপি-জামায়াতপন্থি এই ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলে খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে হলে বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা শহর থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় নীলার মাঠ এলাকায় ভিসি’র পেটোয়া বাহিনী হামলা চালায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় আশপাশে ক্যাম্পাসে বাইরে বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায় পেটোয়া বাহিনী। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীকেই পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিল পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেখা গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য দেশী অস্ত্রশস্ত্রের নিয়ে মহড়া দেয় ওই বাহিনী। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ১৫ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এ হামলার ঘটনায় ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুর রহিমকে প্রধান, আইন বিভাগের ডিন আ. কুদ্দুছ মিয়াকে সদস্য সচিব ও ড. সামচুল আরেফিনকে সদস্য করে তিন সদস্যেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তদন্ত করে তারা আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আজ সোমবারও (২৩ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলন চলমান থাকায় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মিডিয়াতেও তা প্রকাশ হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর জিনিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও তার সঙ্গে ভিসি’র কটাক্ষ আচরণের অডিও-ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে এ ভিসি’র বিরুদ্ধে নতুন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়।

কেএসটি

আরও পড়ুন