• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ১১:৪১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ১১:৪১ এএম

এক মাসে ১৬ হাজার মামলা

খুলনায় বেপরোয়াভাবে চলছে যানবাহন

খুলনায় বেপরোয়াভাবে চলছে যানবাহন

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিল গতবছর। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছিল নানা উদ্যোগ। তৈরি করা হয়েছে সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবাইকে এক প্রকার বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে পুরো সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাস চালকরা।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৯টা। খুলনার গল্লামারী ও ঠিকরাবন্দের মাঝামাঝি জিরোপয়েন্ট এলাকা। রূপসার দিকে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকাগামী পরিবহনের একাধিক বাস। রয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মোংলা, মাওয়া রুটের বাস। সাতক্ষীরার দিকে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে সাতক্ষীরা ও পাইকগাছাগামী যাত্রীবাহী বাস। দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে রাস্তার দুদিকে অসংখ্য ট্রাক। রয়েছে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ হরেক রকমের যানবাহন। অপর প্রান্ত সোনাডাঙ্গার দিকেও অবস্থায়ও প্রায় একই। সবমিলিয়ে জিরোপয়েন্ট এলাকা ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। 

বর্তমানে যান চলাচলে ভীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে জিরোপয়েন্ট এলাকাটি। তাছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানানোর প্যানা বোর্ডে আড়াল হয়ে গেছে চারিদিকের সড়কগুলো। ফলে যে কোন সমযে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করলেও কার্যত অনেকটাই অসহায় বাস চালকদের কাছে। 

খুলনার ১৮টি রুটে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য জিরোপয়েন্ট মোড়ের সড়ক ব্যস্ততম সড়কের মধ্যে একটি। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু বেশিরভাগ চালক কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। যেমন খুশি তেমনভাবেই গাড়ি চালাচ্ছেন তারা। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জ্যাম, ঘটছে দুর্ঘটনা। এ জন্য সিংহভাগ দায়ী গণপরিবহনগুলো। চালকরা বাসগুলো যত্রতত্রভাবে পার্কিং করে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছেন। একটির পিছনে আর একটি বাস আড়াআড়ি করে রেখে তৈরি করছে জ্যামের।

খালিশপুরের নতুন রাস্তা মোড় থেকে মানিকতলা পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানে গাড়ি না থামিয়েই সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন ও নামিয়ে দিচ্ছেন চালক ও হেলপাররা। এছাড়া বিধি না মেনেও পাল্লা দিয়ে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলে সড়কে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। অন্যদিকে অনেক চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালায় বা বাস চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলেন। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রতিনিযত ঘটছে দুর্ঘটনা গত ১৫ দিনে খুলনাঞ্চলে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা ডা. সুমাইয়া ইয়াসমিন নীলা বলেন, ‘আইন কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় তা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরার পর আবার সড়কে আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। এ দেশে পরিবর্তন এত সোজা নয়। কারণ আমাদের সদিচ্ছা নেই।’ তিনি আরো বলেন, সময় এসেছে মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করার। সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রাফিক পুলিশকেও জনবান্ধব হতে হবে। সেই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থা আরো যুগোপযোগী করতে হবে। আমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল হলে শৃঙ্খলা আসবেই।

এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, সড়কে যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আমরা তাদের কোন রূপ ছাড় দিচ্ছি না। আইনগত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেমন নির্ধারিত স্থান ছাড়া পার্কিং, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করার অভিযোগে বিভিন্ন চালকের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতার জন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তারপরও কিছু চালক আইন অমান্য করে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে। 

খুলনা রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শকের (ডিআইজি) মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) মো. শরফুদ্দীন বলেন, ডিআইজি স্যারের নির্দেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করার চেষ্টা চলছে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত আগস্ট মাসে খুলনা রেঞ্জে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১৫ হাজার ৬২৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ১৪ হাজার ১৫৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হযেছে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭০৫ টাকা। 

কেএসটি

আরও পড়ুন